মেডিকেলে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের প্রয়োজন বাড়লেও এর সরবরাহ অপর্যাপ্ত। তাই সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে এবং অক্সিজেন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আইসিডিডিআর,বির আয়োজন বাংলাদেশ অক্সিজেন সামিট ২০২৫-এ এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশে অক্সিজেনের চাহিদা, প্রাপ্যতা, নীতিমালা, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও গবেষণার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকেন্দ্রিক গবেষণা উপস্থাপনার পাশাপাশি ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশন প্রতিবেদন ও মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটির অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত বৈশ্বিক তথ্য-প্রমাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও উপস্থাপিত হয়।
আয়োজকরা বলছেন, মেডিকেল অক্সিজেন এক অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী, কিন্তু এর নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষের জন্যই অক্সিজেন কতটা জরুরি তা বোঝা গেছে। কিন্তু এ জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঘাটতি ও বৈষম্য লক্ষণীয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিকেল ক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু এর সরবরাহ অপর্যাপ্ত। তাই পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অক্সিজেন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে ল্যানসেটের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, রোগী ও স্বজনদের সাক্ষ্য থেকে দেখা যায় যে অক্সিজেন সেবা ও পালস অক্সিমিটার ব্যবহারে এখনো বিপুল পরিমাণ ব্যয় বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাই সরকারগুলোকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় পালস অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সেবা অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ব্যবহার ফি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল অক্সিজেন শিল্পখাত এখন জনস্বাস্থ্য ও মহামারি প্রস্তুতি ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারগুলোর দায়িত্ব হলো বাজারের নিরাপত্তা, প্রতিযোগিতা ও মূল্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক ফার্মাকোপিয়ার (নির্দেশিকা) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অক্সিজেনের মান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা।
এ ছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট ‘অক্সিজেন অ্যাক্সেস টার্গেট’ নির্ধারণ করে তা প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে এ খাতের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে, যেমনটি তারা ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে করে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও দাতাদের উচিত অক্সিজেন প্রাপ্তিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অগ্রাধিকারে রাখা, বৈশ্বিক অক্সিজেন অ্যালায়েন্সকে সহায়তা করা এবং বৈশ্বিক তহবিলের অর্থায়নে অক্সিজেন প্রাপ্তিকে একটি শক্তিশালী অঙ্গীকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
লানসেটের গবেষণা বলছে, বর্তমানে অক্সিজেন কভারেজ, ব্যয়-সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা এবং রোগীভিত্তিক সেবার তথ্যের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে দুটি নতুন সরঞ্জাম প্রস্তাব করা হয়েছে- ‘১০টি অক্সিজেন কভারেজ সূচক’ ও ‘জাতীয় অক্সিজেন অ্যাক্সেস স্কোরকার্ড’। এগুলো ব্যবহার করে সরকারগুলো জাতীয় অক্সিজেন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে পারবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কাঠামোয় সমতা ও টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত ও শক্তি-সাশ্রয়ী অক্সিজেন যন্ত্র ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা হলে ব্যয় কমবে, পরিবেশ রক্ষা হবে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাও হবে আরও শক্তিশালী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই বিনিয়োগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে জাতীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা শুধু রোগীর জীবন রক্ষায় নয়, বরং ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও নেতৃত্ব দিতে পারে।
সামিটে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এর দায় সরকারের। করোনার সময় জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা সমস্যা ছিল। তখন সরকার ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বিপদ চলে গেলে সেটি আর অব্যাহত রাখা হয়নি। এ বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখা যায়নি।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, স্বাস্থ্যে জনবলের ঘাটতি আছে, সেটি পূরণ করতে হবে। সব রোগী যেন অক্সিজেন পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পুরনো এবং নতুন সব হাসপাতলে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান, আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর, পরিচালক (হাসপাতাল) এ এইচ এম মইনুল আহসানসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com