বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল শাখার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মালিক খসরু দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। সহকর্মীদের একাংশ তাকে কটাক্ষ করে ডাকেন “মালের খসরু”—নামটি নাকি এসেছে তার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর জমতে থাকা টাকার লেনদেনসংক্রান্ত অভিযোগ থেকে। অভিযোগের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সরকারি চাকরিতে থেকেও টাকার প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখিয়ে অফিসের ভেতরে ভীতি ও প্রভাব তৈরির পরিবেশ বানিয়ে ফেলেছেন।
সাধারণ নিয়মে সরকারি কর্মকর্তাদের তিন বছর পর বদলি হওয়ার কথা থাকলেও মালিক খসরু ঢাকাতেই ৩, ৫ ও ৭ নম্বর ডিভিশনের “আকর্ষণীয়” পোস্টে টানা এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্র দাবি করে, এক সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর “আধ্যাত্মিক ঘনিষ্ঠতা” তাকে সব সময় ঢাকায় রাখার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। একই অফিসে থেকেই তার পদোন্নতি হওয়াও অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে আজিমপুরে সরকারি আবাসিক ভবন ও কার পার্কিং প্রকল্পে তার দায়িত্ব পালনকে ঘিরে। বিভিন্ন ঠিকাদার এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র অভিযোগ করছে—মালিক খসরু নাকি ফাইল আটকে রেখে কমিশন আদায় করতেন, সাইট ভিজিট বা রিপোর্ট সই করার আগে টাকা দাবি করতেন, এমনকি কারও বিল দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা অজুহাতে চাপ তৈরি করতেন। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছে, “টাকা না দিলে কাগজে সই পাওয়া যেত না,” এবং “হোটেলে আপ্যায়ন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সুবিধা—সবকিছুর দাবি ছিল।”
ইলেকট্রিক্যাল সাবস্টেশন, জেনারেটর, সোলার প্যানেল, ফায়ার সেফটি সহ নানা যন্ত্রপাতিতে নিম্নমানের ব্র্যান্ড অনুমোদনের অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, কম দামের পণ্য পাস করাতেই নাকি তার কমিশন বেশি উঠত। এর ফল হিসেবে আজিমপুরের ভবনগুলোতে বারবার বিদ্যুৎ সমস্যার সৃষ্টি, ফায়ার সিস্টেম অকার্যকর হওয়া, যান্ত্রিক যন্ত্রপাতির দ্রুত নষ্ট হওয়া—এগুলো দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এতে বাসিন্দারা ঝুঁকিতে পড়ছেন এবং ভবিষ্যতে সরকারের বাড়তি খরচের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—মালিক খসরুর পরিবারের সদস্যদের নামে ২৫টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। পাশাপাশি খিলগাঁওয়ে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিশাল জমি, এমনকি ঠিকাদারদের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা করার অভিযোগও শোনা যায়। কিছু সূত্র দাবি করেছে, নামে-বেনামে তার সম্পদের পরিমাণ নাকি ২০ কোটি টাকারও বেশি, যার একাংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো এবং পরে দেশে ফেরত আনার অভিযোগও আলোচনা হয়।
অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, পরিবারের নামে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান—যেমন ব্রাদার্স ইলেকট্রিক—গণপূর্তের প্রকল্পে অংশ নিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে, যা স্পষ্টভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করে। ঠিকাদারদের কেউ কেউ বলছেন, “কাজ না দিলে হুমকি, আর কাজ দিলে কমিশন না দিলে বিল আটকে রাখা—এটাই ছিল নিয়ম।”
তবে অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগ আছে ঠিকই, কিন্তু লিখিত অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন।” আবার অন্য সূত্রের দাবি—অভিযোগ উঠলেই নাকি “উচ্চ পর্যায় থেকে ফোন এসে ফাইল থামিয়ে দেওয়া হয়,” আর সেখানে তদন্ত এগোয় না।
সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে—একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কীভাবে এত সম্পত্তি গড়লেন? তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিদেশ যাতায়াত বা অর্থ লেনদেন—এসব কি কখনও খতিয়ে দেখা হয়েছে?
আজিমপুর প্রকল্পের এই বিতর্ক এখন আরও বড় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—গণপূর্তের ভেতরে স্বচ্ছতা কি আদৌ সম্ভব, যদি এ ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়?
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com