দিন যত যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে ছাদবাগান করার প্রবণতা বাড়ছে। পছন্দ অনুযায়ী টবে লাগানো হচ্ছে ফুল ও ফল গাছের পাশাপাশি শাকসবজিও। এতে ছাদ হয়ে উঠছে সবুজে পূর্ণ। উৎপাদিত ফুল-ফল-সবজির সমারোহ শোভা বাড়াচ্ছে ভবনের। আগে শুধু শহরাঞ্চলেই শখের ছাদবাগান দেখা যেত। তবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার প্রাথমিক স্কুলগুলো ছাদবাগানে সাজছে। এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। তাঁদের যৌথ প্রয়াসেই বর্তমানে উপজেলার ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টনন্দন ছাদবাগান।
সম্প্রতি উপজেলার সুব্রত খাজাঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের টিফিন শেষে অনেক শিক্ষার্থী ছাদবাগানের পরিচর্যা করছে। শুধু ছাদ নয়, স্কুলটির পুরো ক্যাম্পাসে সারি করে লাগানো আছে ফুল ও ফলের গাছ। ছাদবাগানে রয়েছে কমলা, মাল্টা, আমড়া, লাউ, ক্যাপসিকাম, লেবু, সাদা এলাচসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছ। শুধু সুব্রত খাজাঞ্চি বিদ্যালয়ই নয়, উপজেলার হাসিমপুর মোল্লাপাড়া, পশ্চিম গোন্দল, ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও দেখা গেছে একই রকম ছাদবাগান। শিক্ষকরা বলছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ছাদবাগান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃক্ষ ও প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে। ছাদবাগানে কাজ করে আনন্দ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হয়েছে।
সুব্রত খাজাঞ্চি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সৌরভ জানায়, তার বাড়ির চেয়ে স্কুলেই বেশি ভালো লাগে। কারণ, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে সে বাগানে সময় কাটাতে পারে। গাছগুলোতে ফুল বা ফল এলে তার অনেক আনন্দ হয়। গাছে পানি দিতে আর পরিস্কার রাখতে তার ভালো লাগে। হাসিমপুর মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া জানায়, আগ তার স্কুলে আসতে ইচ্ছা করত না। এখন ছাদে বাগান হওয়ার পর স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ক্লাস শেষে বন্ধুদের নিয়ে সে বাগানে কাজ করে। গোয়ালন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আসমা বলে, স্কুলে খেলার জিনিস আর বাগান থাকায় বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না। ক্লাসের ফাঁকে ছাদের বাগানে চলে আসি। বন্ধুরা মিলে গাছগুলো পরিস্কার করি।
সুব্রত খাজাঞ্চি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভূপতি রায় বলেন, আগে এই স্কুলে ছাদবাগান ছিল না। শিক্ষকদের উদ্যোগে ছাদবাগানের পাশাপাশি মাঠের পাশে একটি ফুল বাগান করা হয়েছে। বাগানের পরিচর্যা করতে শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহী। স্কুলের পরিবেশ রক্ষায় বাগানগুলো ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরা খাতুন বলেন, ছাদবাগান শিক্ষার্থীরাই পরিচর্যা করে। এতে তাদের মধ্যে বৃক্ষপ্রেম সৃষ্টি হচ্ছে। হাসিমপুর মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জেবুন্নেছা বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আহ্বানে স্কুলে ছাদবাগান করছি। মাঝেমধ্যে শিক্ষা অফিসে গিয়েও দেখি তাঁরা কীভাবে ছাদবাগান পরিচর্যা করছেন। ছাদবাগান শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, আমাদেরও মন ভালো করে।
চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাদেই যে শুধু বাগান করা হয়েছে তা নয়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের ছাদেও করা হয়েছে সুন্দর বাগান। এরই মধ্যে সেখানে থোকায় থোকায় ধরেছে কমলা, মাল্টা, আমড়া, লেবু, সফেদা, জাম্বুরাসহ নানা ধরনের ফল। রয়েছে গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের এই ছাদবাগান দেখতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আসেন। এখান থেকে অভিজ্ঞতা ও পরামর্শও গ্রহণ করেন তাঁরা। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র বলছে, চিরিরবন্দরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৯৮টি। যার মধ্যে ১০২টি বিদ্যালয়ে ছাদবাগান হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ছাদবাগান গড়ে তোলা হয়েছে ৩২টি বিদ্যালয়ে। বাগান গড়ে তুলতে এরই মধ্যে ফুল-ফলের চারা রোপণ হয়েছে আরও ৭০টি বিদ্যালয়ে। চলতি বছরের মধ্যেই এসব ছাদবাগান ফুল-ফলে ভরে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, শুধু পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো করে গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সারোয়ার হোসনের আহ্বানে ছাদবাগানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই একটু গাছপ্রিয়। এই উপজেলায় ২০১৭ সালে যোগদানের পরের বছর থেকে এই অফিসে ছাদবাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। উপজেলায় ১৯৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯২টিতে পাকা ছাদ রয়েছে। যেগুলো আগে অযত্নে পড়ে থাকত। এ নিয়ে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করি। তাঁরাও ছাদবাগান করার আগ্রহ দেখান। প্রথম ধাপে ৩২টি বিদ্যালয়ে সুন্দর ছাদবাগান গড়ে তুলতে পেরেছি। গত বছর থেকে অন্য ৭০টি বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার সব বিদ্যালয়ে ছাদবাগান গড়ে তুলব।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com