রাহিতুল ইসলাম
২০২০ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, ৭৭০ কোটি জনসংখ্যার এই পৃথিবীতে ৪৫০ কোটি (যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি) ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রতি মিনিটে ইন্টারনেটে আদান-প্রদান হচ্ছে কোটি কোটি তথ্য (ইউজারস ডেটা)। এ থেকেই বোঝা যায়, ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমের ওপর মানুষ এখন কতটা নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা নিত্যদিনের। শুধু সুবিধায় নয়, ইন্টারনেট বা সাইবার জগতে প্রতি পদে ওত পেতে আছে বিপদ। প্রতারণার ফাঁদও। নিজের ব্যক্তিগত তথ্যও যেকোনো সময় বেহাত হয়ে যেতে পারে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলেই নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ যেকোনো ওয়েবসাইটে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিজেকেই উদ্যোগী হতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেহেতু আমাদের আনাগোনা বেশি, সে ক্ষেত্রে এখানে আমাদের সচেতনও থাকতে হবে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে অবশ্যই দুই স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, যেকোনো ওয়েব ঠিকানায় (লিংক) ক্লিক করা যাবে না। আর বন্ধুতালিকায় অবশ্যই নির্বাচিত মানুষদের রাখতে হবে।
অনলাইনে অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে অসম্ভব লোভনীয় ছাড়, উপহারের হাতছানি থাকে। আবার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া (ভাইরাল) কোনো বিষয় আসতে পারে। না জেনে বা যাচাই-বাছাই না করে কোনো কিছুতে ক্লিক করা যাবে না। শুধু সচেতনতাই পারে ডিজিটাল জগতে আমাদের নিরাপদ রাখতে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সিয়াম বিন শওকত বলেন, ‘মুঠোফোনে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে অবশ্যই অ্যাপটি কী কী বিষয়ে অনুমতি (পারমিশন) চাইছে এবং অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য সেই অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন কি না, তা যাচাই করতে হবে। অবশ্যই প্রকৃত উৎস (অথেনটিক সোর্স) থেকে অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে, যেমন প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোর। আর পারমিশনের পাশাপাশি যথাসম্ভব অ্যাপটির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের (শর্তাবলি) দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। অনেক সময় ছোট হরফে লেখা বিরাট আকারের শর্তাবলি না পড়েই আমরা “অ্যাগ্রি” করে দিই।’
সিয়াম বলেন, মুঠোফোনের কিছু নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য আছে, সেগুলো ওপেন রাখতে হবে ও ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি সচেতন থাকতে হবে প্রতিটা মুহূর্তে।
যদি নিজের অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়ে যায় :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখলেন আপনার নিজেরই প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে সাইবার অপরাধীরা বা হ্যাকাররা, তখন কী হবে?
আবার আপনার মুঠোফোনের সব তথ্য, ছবি, ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ যদি চলে যায় হ্যাকারদের হাতে? এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন যে কেউ।
কী করবেন, যদি কখনো অফিস বা বাসার কম্পিউটারটি চালু করে দেখেন গুরুত্বপূর্ণ সব ফাইল ও ডেটা হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে আর সেগুলো তারা ব্যবহারের অনুপযোগী করে দিয়েছে? আবার তথ্য ফেরতের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করছে?
এই সবকিছুই হতে পারে আপনার বা আমার সঙ্গে।
সাইবার নিরাপত্তা গবেষক রাইয়ান মালিক জানান, ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে, যেমন কম্পিউটার বা মুঠোফোনে ক্র্যাক সফটওয়্যার ইনস্টল না করা। অথেনটিক সোর্স ছাড়া সফটওয়্যার ইনস্টল না করা। ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করা এবং অপারেটিং সিস্টেমে যে নিরাপত্তাসুবিধা আছে, তা সচল রাখা। কোনো কিছু নামানোর (ডাউনলোড) আগে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
ডিজিটাল যন্ত্রগুলোর তথ্য যথাসম্ভব ব্যাকআপ রাখতে হবে, এতে করে হ্যাকার যদি ডেটা ব্যবহারের অনুপযোগী করে দেয়, তাহলে ক্ষতি কম হবে। ইন্টারনেটে অনেক জায়গায় হ্যাকারদের বিভিন্ন রকম ফাঁদ পাতা থাকে, তাই ডিজিটাল দুনিয়ায় সতর্কতার সঙ্গে বিচরণ করতে হবে।
সর্বোপরি নিজে সচেতন থাকা ও অন্যকে সচেতন করার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সাইবার ঝুঁকি থেকে অনেকাংশেই নিরাপদ থাকতে পারবেন।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com