বহু কাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। গত শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে স্বাক্ষরিত এই দলিল কেবল একটি রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং এটি নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে ধারণ করে রচিত এই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাষায় ‘নবজন্ম’। বর্বরতা থেকে সভ্যতায় যাত্রা শুরুর নামান্তর। দীর্ঘদিনের আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৪টি দলের এই ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রমাণ করে যে, জাতীয় স্বার্থে অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাজনীতিবিদদের আছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রায় এক বছরের নিরলস আলোচনার ফলস্বরূপ এই সনদে রাষ্ট্র সংস্কারে ৭টি অঙ্গীকার ও ৮৪টি প্রস্তাব স্থান পেয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এটিকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। বহু স্রোত যেখানে একটি মোহনায় এসে মেলে-তা হলো গণতন্ত্র। এটি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর এক দৃঢ়প্রত্যয়। তবে এ নবজন্মের পথ এখনো পুরোপুরি মসৃণ নয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) মোট ৬টি দলের এদিন সনদে স্বাক্ষর না করা ভবিষ্যৎ ঐক্যের পথে কিছু চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের একটি অংশের বিক্ষোভ প্রমাণ করে যে, গণ-অভ্যুত্থানের পূর্ণাঙ্গ আকাঙ্ক্ষা পূরণে আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবশ্য পরবর্তীকালে কয়েকটি দল এতে স্বাক্ষর করার কথা জানিয়েছে, যা ইতিবাচক।
সনদ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, এটি এখন কেবল কাগজে আছে, যা কাজে প্রমাণ করতে হবে। আমরাও মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের যে প্রথম ধাপ-স্বৈরাচার বিতাড়ন, তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে। প্রধান উপদেষ্টাও দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন, নির্বাচনের সুর যেন আজকের ঐক্যের সুর হয়। তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি এই বলে আহ্বান জানিয়েছেন, নির্বাচন যেনতেনভাবে না করে যাতে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় ও উৎসবমুখর করা হয়, যা সারা বিশ্বের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমাদের প্রত্যাশাও তা-ই।
উল্লেখ্য, জুলাই সনদকে দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন এবং আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য কমিশনকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশ করতে হবে। সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর এখন প্রধান দায়িত্ব হলো এই সামাজিক চুক্তিকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা। কেবল তখনই ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’য় রূপ নেবে বাংলাদেশ, শুরু হবে সভ্যতার পথে এক নতুন যাত্রা। আমরা মনে করি, এটি একটি বৈষম্যহীন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতির প্রথম পদক্ষেপ। এই সনদ যেন কেবল ইতিহাসের পাতায় দলিল হয়ে না থাকে, তার জন্য প্রয়োজন স্বাক্ষরের অঙ্গীকার সব পক্ষকে কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত করা।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com