এক
হলুদ সরষেফুলের ক্ষেতে আঁচল উড়িয়ে মিষ্টিরোদে নদীচরের ঢালে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে, নীলাকাশের দিকে তাকিয়ে নাচতে নাচতে হাঁটে নীলিমা। পিছে ফেলেযায় বেণুবন, কদম্ব সারি, আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, নিমের সারি। বরইফুলে ভ্রমর বসে দেখে একটুখানি। মেহগনির ফল উপরদিকে লেজ উঁচিয়ে থাকে শানিত অস্ত্রের ধার। সজনেফুল প্রভাতে পড়ে ন্যাতিয়ে রয় মেঠো পথটায়। গ্রামের রাখাল বালক গরুনিয়ে ঘরে ফেরে হরষে তুলে গান:
সোনা ঝরা বাংলা আমার
দেবনা দেবনা শত্রুর হাতে ছেড়ে
যতক্ষণ আছে একবিন্দু রক্ত এ দেহে।
সময়টা ১৯৭১ ২৬শে মার্চ। দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলিমা। বাবা রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে অনেক নাম যষ, খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। বাবা প্রায় বিশ বছর ধরে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে। বাবার হাতে পাশ করে গিয়েছেন অনেক ছাত্র দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। এর আগে বাবা প্রাইমারী স্কুলে চাকুরী করতেন। তখন বাবা বিয়ে করেননি।
--বাবার মুখে শুনেছি,
-- আমার দাদু বলতেন,
-- লতিফ তোকে এতো কষ্ট করে লেখা - পড়া শেখালাম তুই নিজের গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী করবি।
কিন্তু ম্যানেজিং কমেটির সভাপতি ভূঁইয়া সাহেবের মেয়েকে আমি ভালোবাসতাম বলে,
-- আমি যতোবার ইন্টার্ভিউ দিয়েছি ততবার ফেল করেছি।
-- জিজ্ঞাসা করলাম বাবা কেন?
--- আমি ভালো স্কুলে চাকুরী করলে হয়তো কোহিনুর ভূঁইয়া সাহেবের নিকট আমার কথা বলবে! আর একটি কারন ছিল আমরা শিক্ষায় ও বংশমর্যাদায় তাদের সমতুল্য ছিলামনা।
-- যখন কোহিনুরের বিয়ে হয়ে গেল তখন আমার রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী হল।
-- কিন্তু তখন তোমার দাদু বেঁচে নেই।
-- তোমার দাদুর খুব ইচ্ছে ছিল আমি রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী করি। হেরিক্যানের আলোতে বাবা, মেয়ের কথোপকথনের প্রতিধ্বনি হয়ে চোখে, মুখে প্রতিফলিত হলো পুনঃ পুনঃ।
এমন সময়ে আসছালামু ওয়ালাইকুম স্যার।
ওয়ালাইকুম আসছালাম। কোয়েল তুমি কবে আসলে গ্রামে?
-- স্যার, শুনেছেন তো ঢাকার অবস্থা ভালো না। আজই এলাম।
-- স্যার, রেডিওটা অন করেন খবর শুনি।
-- কোয়েল বাবার খুব প্রিয় ছাত্র।
-- ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে লেটার মার্কস নিয়ে। কোয়েলদের আর্থিক অসচ্ছলতা জন্য বাবা টিউশনিতে কখনো ওর নিকট থেকে টাকা নিতেন না। তবে উনার চাচাদের আর্থিক সচ্ছলতা বেশ ভলো থাকার জন্য উনার চাল - চলনে বুঝা যেতনা।
-- পদবিতে কোয়েলরা চোকদার গোষ্ঠী
-- বাবা আর কোয়েল খবর শুনার জন্য বেশ উদ্বিগ্ন! আমিও পাশে আছি। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- নীলিমা তুমি এবার ম্যাট্রিক দিবে?
-- জ্বি ভাইয়া।
স্যার, অনেক চেষ্টা করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ( বাসস) ধরলেন রেডিওটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে। তারপর বাহিরে গিয়ে চেয়ারের উপর দাড়িয়ে রেডিও এন্ট্রিনা টেনে দু'জনে খবর শুনলেন।
-- ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট। এই অভিযানের নির্দশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাওফরমান আলি। ২৫শে মার্চ রাত বাঙালি জাতির জীবনে এক ভয়াল বিভীষিকাময় রাত। ( ২৫শে মার্চ রাত গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয় বাঙালির জীবনে।)
চলবে-
ধানসিড়ি
০৩/০৩/২৩
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com