বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: ভোলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন রিজুকে ঘিরে নানা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও টেন্ডার–বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তার অতীত কর্মজীবন, রাজনৈতিক যোগাযোগ, এবং গাজীপুরে দায়িত্ব পালনকালে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার কারণে বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি তদন্ত কমিটি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।
আশরাফ উদ্দিন ছাত্রজীবনে কুয়েটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পরে বিশেষ ৩২তম বিসিএসের মাধ্যমে গণপূর্ত বিভাগে যোগ দেন। প্রথম দিকে ঢাকা ডিভিশনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মিরপুর গণপূর্ত উপবিভাগ-১ ও ঢাকা গণপূর্ত উপবিভাগ-৬–এ দীর্ঘ সময় দায়িত্বে ছিলেন। সহকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ—এই সময়গুলোতে নানা উপায়ে তিনি অবৈধ টাকা আয় করেছেন।
পরে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে প্রথম পোস্টিং পান গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগে। এখানেই তাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবি—দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সাবেক গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। অভিযোগ আছে, জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ লোকদের সাথে মিলে আশরাফ ও তার স্বজনরা এলাকায় টেন্ডার কাজে প্রভাব বিস্তার করেন এবং কিছু ঠিকাদারকে সুযোগ দিয়ে বড় অংকের কমিশন নেন। এমনকি নিজের আপন ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের কাছেও প্রায় ছয় কোটি টাকার একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যা সরকারি প্রক্রিয়া ও নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়।
গাজীপুরে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুন মাসে তিনি প্রায় বিশ কোটি টাকা লোপাট করেছেন—এমন অভিযোগও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নাকি কাজ না হয়েও কোটেশন আহ্বান করে দ্রুত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আবার কিছু বিল নাকি উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর সই–সিল ছাড়াই পরিশোধ করা হয়েছে, যা সরকারি নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
এসব অনিয়মের কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আশিক আহমেদ শিবলী, সদস্য মোঃ বদরুল আলম, এবং সদস্য–সচিব হাফসার মৌরি। তারা বর্তমানে নথিপত্র ও অভিযোগ যাচাই করছেন। কমিটির আহ্বায়ক জানিয়েছেন—তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে বেশ কিছু অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে।
অন্যদিকে আশরাফ উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন—তার বিরুদ্ধে যেসব লেখা বের হচ্ছে, তার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি দাবি করেন, নতুন যিনি ভোলায় দায়িত্ব পেয়েছেন—শারমিন আখতার—তারও নানান বিতর্কিত কাজ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো কেউ তুলে ধরছে না।
কিছু সূত্র আরও দাবি করছে—গাজীপুরে দায়িত্ব পালনের সময় আশরাফ উদ্দিনের রাজনৈতিক যোগাযোগও প্রভাব ফেলেছে। কেউ কেউ বলছে, তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। ভোলায় বদলি হওয়ার পর তিনি আবার অন্য রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন—এমন সংবাদও পাওয়া গেছে।
এখন অভিযোগ উঠেছে, রাঙ্গামাটিতে সম্প্রতি অনুমোদিত ১১৫০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্পে গিয়ে তিনি আবার সক্রিয় হতে চাইছেন। তার অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন—তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তবে বদলি করা কোনো শাস্তি নয়। বরং সরকারি চাকরি নিয়ম অনুযায়ী সঠিক তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সামগ্রিকভাবে, গাজীপুরে তার দায়িত্ব পালনকালীন অনিয়ম, টেন্ডার–বাণিজ্য, আত্মীয়প্রীতি ও বিল–জালিয়াতির নানা অভিযোগ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পরই জানা যাবে—আশরাফ উদ্দিন রিজুর বিরুদ্ধে ঠিক কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com