বিডি ২৪ অনলাইন নিউজ: আব্দুল মতিন দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানার কাশিমপুর গ্রামে দরিদ্র কৃষক নেজাম উদ্দীন ছেলে। দারিদ্রতা ও অভাব অনটনের ভিতর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তার জীবন তবে সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঘুষ দুর্নীতি আর অবৈধ অর্থে খুলে গেছিল ভাগ্যের চাকা। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের চাহিদা ও লোভের কোন শেষ নেই যেখানে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষ কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না তবুও মানুষ অর্থের লালসায় উন্মাদ হয়ে যায় তেমনি একজন আব্দুল মতিন সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন অর্থ আত্মসাৎ করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
আবদুল মতিন ২০০৩ সালে ড্রেজিং বিভাগের ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। এবং দুই বছরের মাথায় হয়ে যান প্রধান প্রকৌশলী, জড়িয়ে পড়েন ব্যাপক দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে, ২০০৭ সালের তৎকালীন ফখরুদ্দিন মইনুদ্দিন সরকারের আমলে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারের ভয়ে তিনি পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সখ্যতা গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক এমপি মন্ত্রীর সঙ্গে এমনকি সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও ছিল তার গভীর ঘনিষ্ঠতা, তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের সবচেয়ে বিতর্কিত দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী শাজাহান খান ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ছত্রছায়ায় বি আই ডব্লিউ টি এর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও আত্মসাৎ করেছেন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দেওয়ার পরও কখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারণ তিনি ছিলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অঘোষিত সম্রাট কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না।
১৬ বছর বিআইডব্লিউটিএ (ড্রেজিং) প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ২০২১ সালের জুন মাসে অবসর গ্রহণ করেন কিন্তু অবৈধ অর্থের নেশায় পাগল হয়ে যান তোড়জোড় শুরু করেন আবারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় তৎকালীন পুনরায় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসার জন্য ৫০ কোটি টাকা ঘুষ নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কে নিয়ে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন, এবং এই অর্থ দেওয়ার পর নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ চৌধুরী সবচেয়ে সমালোচিত বিতর্কিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আব্দুল মতিনকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের ৩০ শে জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠান।
সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সম্মতি দেন এরপর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন সাপেক্ষে আব্দুল মতিনকে পুনরায় বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেন। গোটা নৌপরিবহন অধিদপ্তর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল আব্দুল মতিনের এই পুনরায় নিয়োগে, কিন্তু ফ্যাসিবাদ সরকারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।
৫০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পুনরায় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসে আব্দুল মতিন শুরু করে দেন আরো লাগামহীন দুর্নীতি ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ইতিমধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে তার দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদ।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর বহুল আলোচিত ড্রেজার ও জলযান সংগ্রহ এবং অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিভিন্ন তথ্যে উঠে আসে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ৩৫টি ড্রেজার, ১৬১টি জলযান, ৩টি ড্রেজার বেইজ এবং নারায়ণগঞ্জে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণের কথা ছিল। প্রকল্পের প্রথমিক বাজেট ছিল ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়ে শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সাল।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে অবসরে যাওয়ার আগে বিআইডব্লিউটিএ ধ্বংস করে ঘুষ দুর্নীতি আর সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে করেছেন সম্পদের পাহাড়
দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রামপুরা মৌলভীরটেকে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি পাঁচতলা বাড়ি, খিলগাঁও রিয়াজবাগে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং টাঙ্গাইলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ।
আমাদের অনুসন্ধানী সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে স্ত্রী নাসিমা আক্তার দুই সন্তান, শশুর সুজাত আলী , শাশুড়ি মজিদা বেগম, শালা শালি সহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে নামে দিনাজপুর, রংপুর শহর, ও রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচা বনানী গুলশানে রয়েছে একাধিক প্লট ফ্লাট।
তবে কোন এক অদৃশ্য কারণে তিনি এখনো প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতার দাপট এক চুলও কমেনি অভিযোগ আছে ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার সরকার পুনর্বাসনের জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন।
আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনেই বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন আব্দুল মতিন, রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রধান কার্যালয় উল্টো দিকে অবস্থিত কনকর্ড টাওয়ারের ১৭/এ,৫ এই ভবনে বসবাস করছেন, ও সেগুনবাগিচায় ইস্টার্ন হোমস এই বিল্ডিং রয়েছে তার একাধিক ফ্লাট, এই ফ্ল্যাট গুলোর মূল্য কয়েক কোটি টাকা, কনকর্ড টাওয়ার এই বাড়িতেই রয়েছে তার একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি এ যেন দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রের আইনকে তোয়াক্কা না করে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো।
চাকরি জীবনের বৈধ আয়ে এই সম্পদের মালিক হওয়া অসম্ভব দাবি করে দুদক তদন্তে নামে। বর্তমানে দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু জাফর-এর মাধ্যমে অনিয়মে যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ডিএলআই বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ
রামপুরায় ডিএলআই বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়ে তোলেন বিআইডব্লিউটিএ’র প্রায় ২০ জন প্রকৌশলী। অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানিতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে।
দুদক ইতিমধ্যেই ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, রাজউক, সিটি করপোরেশন, এনবিআর ও ভূমি অফিসে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মতিন, তার স্ত্রী শাহানা আক্তার জলি ও দুই সন্তানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, বলে জানিয়েছে কমিশন।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত Bd24news.com