রাবি প্রতিনিধিঃ রায়হান ইসলাম,
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়ানক প্রভাবে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার দরূন ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও।
রাবিপ্রথমবারের মতো কোয়ারেন্টাইনের অভিজ্ঞতা। ভেবেছিলাম এবার গৃহবাসী হব হয়ত কিছুদিনের জন্য। কয়েকদিনের মাঝে যখন বন্দী পাখি হয়ে গেলাম তখন বুঝলাম মোটেও ভালো নেই আমরা।প্রথমদিকে সময় কাটছিলো উপন্যাস পড়ে, স্মৃতিচারণ করে।মা -বাবার কাছে বিভিন্ন গল্প শুনে।যদিও সব গল্পই প্রায় শোনা। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এসব বিষয়ে আগ্রহ তত হারিয়ে যাচ্ছে। অবসাদ শূন্যতা জাপটে ধরছে আমাকে। পৃথিবী যেখানে অসুস্থ সেখানে আমি ভালো আছি এ কথা বড়ই বেমানান। বাসায় বেশিদিন থাকলে নাকি ভালোবাসা কমে যায় সেও বোধ হচ্ছে। ক্লাসগুলোকে মিস করছি হয়তো বা দূরে থাকার দরুণ। মিস করছি রাকসু শফিক ভাই এর চা।মিস করছি গত বছর প্রাণের বন্ধুের সাথে গ্রীস্মের ক্যাম্পাসে আম, লিচু খাওয়ার আনন্দঘন মহুর্ত গুলোকে। ভেবেছিলাম এবারও হবে!!মিস করি প্রাণের উদীচী সংসদকে। রাকসুর সামনের সেই আড্ডাকে। মুক্ত আকাশের নিচে বসে গানে গল্পে কাটানো মহুর্তগুলোকে।করোনাকালে মানুষ বুঝেছে প্রকৃতি কত রূঢ় হতে পারে!এবার শান্ত হও। প্রকৃতির রোমশ নীড়ে মুক্ত আকাশে, বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ফিরতে চাই। ততদিন আশা বাঁচিয়ে রাখছি।২.যোবায়ের আহমেদদর্শন বিভাগ, রাবি।গত ৮ ই মার্চ বাংলাদেশে ১ম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ তড়িঘড়ি করেই বাসায় আসি।শিক্ষা গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই বাইরে থাকার ফলে তেমন বাসায় সময় দেয়া হয়ে ওঠেনা।করোনাকালীন এ ছুটি বাসায় পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারছি বেশ ভালভাবে। মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর তৃপ্তিটি পুরণ হলো দীর্ঘদিন পর।পাশাপাশি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও একটি ছাত্রসংগঠনের সক্রিয় কর্মী হিসাবে কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।পাশাপাশি যারা আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল তাদের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে করোনাকালীন সময়ে একদল গুজব সৃষ্টি করলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সেই জায়গা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থেকে গুজব প্রতিহত করতে কাজ করছি।যেহেতু এখন হাতে সময় অনেক এই সময়টাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা তথ্য নির্ভর বইগুলো পড়েই সময় কাটছে।কিন্তু কোথায় যেন এক শূন্যতা কাজ করছে প্রাণে ক্যাম্পাসটির জন্য।মতিহারের সেই চির সবুজ চত্তরটি ঘিরে হয়ে গেছে কত স্মৃতি, কত ভালবাসা।মিস করছি প্রিয় মানুষগুলোর মুখ।যাদের সাথে সর্বদা ভাগাভাগি করে কাটানো হতো সকল ভাল -খারাপ মহুর্তগগুলো।৩.জুয়েল রানাবাংলা বিভাগ, রাবিপ্রকৃতি আজ নিস্তব্ধ। চারপাশে শুধুই মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তখন বুঝিনি করোনা ভাইরাস এতো মারাত্মক মহামারি। ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে আসলাম বাসায়। এসে লকডাউনে কাটতে শুরু করল জীবন। তাই পরিবারকে সময় দেয়ার একটা সুযোগ পেলাম। শুরুতে ভালই কাটছিল সময়। কিন্তু আস্তে আস্তে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অসচেতনতার কারণে আজ আমরা ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজমান।তাই নিজ দায়িত্ববোধ থেকে মানুষকে এই মহামারি থেকে রক্ষার জন্য গনসচেতনতায় অংশ নিলাম। বিভিন্ন ভাবে তাদের সচেতন করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আর এই লকডাউনে বাসায় বসে বসে "অসমাপ্ত আত্মজীবনী "ও হূমায়ুন আহমেদের সাহিত্য সামগ্রী পড়তেছি। এছাড়া কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করে গরিব- দু:খী মানুষকে সহযোগিতা করতেছি।আশা করি খুব দ্রুত আমরা এই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবো এবং ফিরে আসব মতিহারের সেই চির চেনা নীলাভূমির বুকে।ইনশাআল্লাহ।৪.মাসুম চৌধুরীসমাজকর্ম, রাবিমার্চের ১৬ তারিখে শুনতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। হল ছাড়তে বলা হয়েছে ছাত্র ছাত্রীদের। সবাই বাড়িতে ফিরছে আমি সেই জনস্রোতে ভেসে আসলাম বাড়িতে। প্রথম কয়েকদিন ভালই কাটল বাসায়। একটু ফেসবুক,মাঝেমাঝে টিভি আর এসবে মাঝে একটু বইও খুলেছি বটে। কিন্তু সময়ের সাথে ভাল লাগাটা কমতে থাকে। আর বাড়তে থাকে ভয়। দিন দিন নতুন রুগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুসংখাও।এখন কাজ ধানকাটার ধুম পরেছে গ্রামে। ধান কাটার কাজে লেগে করোনাকে যেন সবাই ভুলেই গেছে একপ্রকার। এদিকে আমিও চেষ্টা করি বাবা মাকে সাহায্য করার।অনেকদিন পর বাসাই এতো সময় দিতে পারছি। ভালোই লাগছে।কিন্তু এখন একটা নতুন ভয় জন্ম নিয়েছে মনে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়। পরিস্থিতি এরকম চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পরবে। চাকরীর বাজার আরো কঠিন হবে। কি হবে তখন আমাদের মতো এই মধ্যবিত্ত পরিবারের বেকার গ্রাজুয়েটদের??