রাবি প্রতিনিধিঃরায়হান ইসলাম
আজ ২০ মে বুধবার দিবাগত রাত মুসলমানদের জন্য মহিমান্বিত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। মুসলমানদের কাছে শবে কদর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত।
আলেম উলামাদের মতে এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়। এই রাতকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ‘সুরাতুল-কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও নাজিল করেন। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত।
অন্য ভাবে বললে, যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদরের রাত।
প্রতিবারই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা খুব আগ্রহের সঙ্গে এই রাতটিতে ইবাদত বন্দেগী করে
থাকেন।
কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কিভাবে এই রাতটি পালন করা উচিত।
জানতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আকন্দ।
তিনি বলেন,
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গোটা দেশ আজ খুবই ঝুকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ।
চলমান এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বৎসরের ন্যায় এবারে শবে কদরের রাতটি এতো উৎসব মুখর ভাবে পালন না করাই মনে হয় ভাল হবে।
কারন বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় এই রাতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাত ভর মসজিদে ওয়াজ, মিলাদ মাহফিল ও যিকির আসগার করে কাটিয়ে দেন।
দিন বিশাল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। যেখানে সচরাচর হাজারো লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান গুলো বেশ আবেগ ঘনও হয়ে থাকে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে তার মহান রবের নিকট মাগফিরাত কামনা করে থাকেন বিনীত চিত্তে।
কিন্তু এবারের চলমান পরিস্থিতে তিনি শবে কদরের ইবাদত একটু অন্যভাবে পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন,২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে কদর হতে পারে। ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর হবে এমন কোথাও পাোয়া যায় নি। কোন আলেম ওলামাও এমন মতামত দেয় নি। তবে ২৭ শে রমজানের রাতকে অনেক ওলামা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
তাই এই রাতে একটু বেশি ইবাদত বন্দিগী খারাপ না।
আর এটা যেহেতু একটি নফল ইবাদত।
আর নফল ইবাদত বাড়িতে পড়াই উত্তম বলে অনেক হাদিসে পাওয়া যায়।
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
‘হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে বা অঞ্চলে যদি কোনে প্রকার প্লেগ বা মহামারি জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তোমরা যারা (ওই অঞ্চলের) বাহিরে আছ তারা ওই শহরে প্রবেশ করো না। আর যে শহরে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে তোমরা যদি সে শহরে বসবাস করো তবে তোমরা সে অঞ্চল বা শহর থেকে বাহির হয়ো না।’ (বুখারি, মুসলিম)
মহামারি মূলত আল্লাহর গজব। মহামারি প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি, যা (এ রকম শাস্তি) বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (তিরমিজি)
তাই দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বেশি বেশি আল্লাহর নিকট তওবা ও মাগফিরাত কামনা করতে হবে।
আর করোনাভাইরাস যেহেতু একটি সংক্রামক ব্যধি। সেহেতু সকলকে অবশ্যই হাদিসের নির্দেশনা ও সাস্থবিধি মানতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এই অবস্থায় যতটা সম্ভব আমাদের বিশাল আকারে ওয়জ ও ইফতার মাহফিল থেকে বিরত থাকা উচিত। আর বিভিন্ন এলাকার মানুষদের একত্র করে এ সমস্ত কাজ মোটেও কোরান হাদিস সম্মত নয়। প্রয়োজনে ফরজ ইবাদত টুকু মসজিদে পরে সকল নফল ইবাদত বন্দিগী বাড়িতেই পরে আল্লাহর কাছে এই মহামারি থেকে রক্ষার জন্য পার্থনা করাই উত্তম।
তাই এ বছর তিনি সকলকে কোরআন সুন্নাহ ও সাস্থবাধি মেনে ঘরেই ইবাদতের আহ্বান জানান।