রুবেল শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রশাসন শব্দটি শুনলেই যেন কেমন গা শিউরে ওঠা অনুভূতি আসে। সেখান থেকে সেবা পাওয়া বা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌছানো সত্যিই বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার। দিনের পর দিন ঘুরে কাজ করাতে না পেরে মানুষ অনেক সময় আস্থা হারিয়ে ফেলে সরকারি অফিস ও অফিসারদের উপর।
কিন্তু এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। তেমনই একজন ব্যতিক্রম সরকারি অফিসার আলমগীর কবির, যিনি বর্তমানে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশে দূর্যোগ সময়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে শিবগঞ্জ উপজেলার প্রশাসন। এই কাজে যুক্ত করে নিয়েছেন স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবীদেরও। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠে শ্রম দিচ্ছেন দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য।
করোনার কারণে কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির নিজে উপস্থিত থেকে এই কাজ পরিচালনা করছেন। খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন অসহায় মানুষের দুয়ারে। এছাড়া ইউএনও কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ কাজ করছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। (ইউএনও) আলমগীর কবির ও উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মৌলি মন্ডলের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ হাটবাজার ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার উপায় সম্পর্কে বলা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে আসতেও বারণ করছেন তারা।
এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে পিঁয়াজকাণ্ডে বেশকিছু অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী লবণ গুজবে বাজার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রেতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দিয়ে নিমিষেই বাজার স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
ভালো কাজ, ভালো ব্যবহার আর ভালোবাসা দিয়ে ইতোমধ্যেই (ইউএনও) আলমগীর কবির, জয় করে নিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মন। ক্ষমতাবান মানুষ থেকে শুরু করে সাধারন দিনমজুর সবার কথা তিনি শোনেন মনোযোগ সহকারে। সাধারণ মানুষের জন্য নিজের অফিস করেছেন উন্মুক্ত।
যে কোনো প্রয়োজনে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে কড়া নাড়ছে নির্বাহী কর্মকর্তার দরজায়। নিজেদের কষ্টের কথা তারা বলছেন তাদের প্রিয় ইউএনও স্যারের সাথে। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজন অনুযায়ী সেবাও পেয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সেবা পাওয়া বেশকিছু সুবিধা প্রাপ্তি তারা অনেকেই জানালেন, এমন ঘটনা আমাদের দেশে বিরল। আলমগীর স্যারের মতো সরকারি কর্মকর্তারাই একদিন বদলে দেবেন আমাদের দেশ। উনাদের মহতি উদ্যোগেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
নিজের এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর কবির জানান, 'সরকারি অফিসগুলো তৈরি করা হয় জনসাধারণের কাজের জন্য। আমি যদি আমার অফিসে প্রবেশের জন্য কাউকে বাধা দিই, অফিসের ও সাধারণ মানুষের মাঝে পর্দা দিই,দেয়াল তুলি,তাহলে তারা কীভাবে সেবা নেবে।
আমরা চাই জনসাধারণের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো দূরত্ব থাকবে না। জনসেবার জন্যই আমাদের প্রশাসন। আমার এখানে সেবা নিতে এসে অনেকেই অনুমতি চান। আমার অফিসে আসার জন্য কারো ধর্ণা বা অনুমতির কেনো প্রয়োজন পড়বে না।
তিনি আরো বলেন, 'আগে আমার অফিসের সামনে অনেক লোক জড়ো হয়ে থাকতো। ভয়ে অনেকে ভেতরে প্রবেশ করতো না। এখন সবাই নির্ভয়ে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অফিসে কথা বলতে আসেন। কেউ আসেন সামাজিক সমস্যা কিংবা অভিযোগ নিয়ে।
এদিকে করোনা দুঃসময়ে উপজেলার অসহায় কাঠমিস্ত্রীর ঘরে জন্ম হয়েছে শিশু আবু সাঈদের। জীবিকার তাগিদে শিশুটির পিতা অনেক দূরে ছিলেন, নবজাতক সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি বাবা। চলমান করোনা সংকট ও স্বামীর অনুপস্থিতিতে থমকে যায় পরিবারের জীবণ জীবিকা।
বিষয়টি জানতে পেরে (ইউএনও) আলমগীর কবির নবজাত শিশুর জন্য নতুন পোশাক, তার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং প্রতিসূতি মায়ের খাবারের জন্য শাক-সবজি, মাছ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
করোনা প্রভাবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী যারা ভাতার আওতায় আসেননি, এমন প্রতিবন্ধী,
৬ মাসে বেতন না পাওয়া মানবেতর জীবনযাপন করা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও ইমামসহ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা খাদ্য সংকটে পরা ব্যক্তিদের উপজেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলার ২২ টি হাটবাজার এবং জনসমাগম স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবিরের এমন মানবিক কার্মকাণ্ডে উপজেলাবাসী মুগ্ধ।