গাইবান্ধা সদরের কামারজানীর গোঘাট গ্রামে ঐত্যিহবাহি দূর্গামন্দিরসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন। ৬টি উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৫২টি পয়েন্ট ভাঙন কবলিত বন্যার পূর্বে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গো-গাট এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় কামারজানীর গোঘাট গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
শুক্রবার বিকেলে ভাঙনের কবলে পড়ে ঐতিহ্যবাহি পুরাতন দূর্গামন্দিরসহ ৫০টি বসতবাড়ি ও সংলগ্ন জমি এবং গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া স্লুইসগেট, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, কামারজানি বন্দর, মার্চেন্ট হাইস্কুলসহ ৫শ’ পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি এখন ভাঙন কবলিত হওয়ায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে। এলাকাবাসিরা জানান, ২০১৬ সালে গো-ঘাট গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়ে।
এরআগে এ গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের বসত বাড়ি, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনাসহ ২শ’ ১৫ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে বন্যার স্রোতে নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাওয়ায় সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দীঘলকান্দি, গোবিন্দপুর, পাতিলাবাড়ি, নলছিয়া, কালুরপাড়া ও বেড়া গ্রামের দু’শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া ফুলছড়ি উপজেলার চর কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝানঝাইড় কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কালাসোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এজন্য বিদ্যালয় ৪টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অপরদিকে সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে বাজে চিথুলিয়া ও চিথুলিয়া গ্রাম দুটির ৩১৮টি পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর, হরিপুর ও কাপাসিয়ার পোড়ার চর এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ায় ব্যাপক নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা তীরের ৭৮ কি.মি. বাঁধসহ ঘাঘট, করতোয়া, নুরল্যার বিল, আখিরা নদীসহ সব মিলিয়ে ২ হাজার ২শ’ ৪০ কি.মি. বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি উপজেলার ৫২টি এলাকায় বাঁধের বেহাল অবস্থা।
এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটায় এবায় বন্যার তোড়ে বাঁধ ধসে যাওয়ায় অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে বালির বস্তা, পাথর ও মাটি ফেলে কোনরকমে এবারের বন্যায় ভাঙন থেকে রক্ষা করা হলেও এখন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বাঁধগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একনেকে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় নদী তীর রক্ষার প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ৪শ’ ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।