কোরবানীর পশুর হাটে গরুর সংখ্যা বেশী হলেও ক্রেতা খুবই কম। হাটের ইজারাদাররাও লোকসানের ভয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। হাট-বাজারে গরু বিক্রির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবার ঈদে কোরবানী কম হবে।
টাঙ্গাইল থেকে এমনি চিত্র জানা যায়, চলতি ভয়াবহ বন্যায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারীরা। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি হচ্ছে হাটে। জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী হাট দেশের অন্যতম বৃহত্তর পশুর হাট। এখানে সপ্তাহে ২ দিন পশুর হাট বসে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা।
বেশীর ভাগই দেশী জাতের খামারীদের গরুর দেখা মিলছে হাটে। ঈদকে সামনে রেখে গরুর সংখ্যা বেশী হলেও ক্রেতার সংখ্যা নগণ্য। এছাড়া প্রকৃত দামও মিলছে না বিক্রেতাদের। ফলে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ কম দামে গরু বিক্রি করছেন। হাটে গরুর পাশাপাশি ছাগলের দেখাও মিলেছে।
গোবিন্দাসী হাটের স্থানীয় ইজারাদার ও অংশীদারী ব্যবসায়ী লিটন মন্ডল জানান, এবার হাটে দেশী খামারীদের গরুর সংখ্যা বেশী। দামও সাধ্যের মধ্যে। তবুও বিক্রি হচ্ছে না। এবারের ঈদে গেল গতবারের চাইতে পশু কোরবানী কম হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও উপজেলায় রয়েছে শিয়ালকোল, নিকরাইল, গোবিন্দপুর পশুর হাট।
পাশ্ববর্তী পিকনা হাট থেকে আগত গরু ব্যবসায়ী নুরু মিয়া জানান, আমার খামারে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছি। আবার বন্যায় গরু নিয়ে এসেছি হাটে। ৭০ হাজার টাকার একটি গরু ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। অবশিষ্ট গরু ক্রেতা সংকটে বিক্রি করতে পারিনি।
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গাবসারা গ্রামের ছাগল বিক্রেতা ফরিদুল ইসলাম জানান, পুরো চরা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ছাগলের জন্য ঘাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে থাকার ঘরটিও পানিতে ডুবে যাওয়ায় ছাগলগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখন বিক্রি করে কিছুটা ক্ষতি ঠেকানো গেলে বাঁচি। কিন্তু এখন হাটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সেটিও পারব কিনা সন্দেহ।
এমনি চিত্র সারা দেশের বন্যা কবলিত সকল এলাকায়। এবারের ভয়াবহ বন্যায় অধিকাংশ খামার পানিতে তলিয়ে গেছে অথবা নদী ভাঙনে অনেক খামার বা খামারীর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় গরু নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এখন গরু পালনের বা রাখার জায়গা নেই বললেই চলে।
গোপালপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মো: ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু জানান, বন্যা আর করোনায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঈদে কোরবানী দেবার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছে। এখন আবার ঈদের আগে এরূপ ভয়াবহ বন্যায় কোরবানী করা নিয়ে চরম বিপাকে বানভাসী মানুষ।
টাঙ্গাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার থেকে টায় যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতও বেশি হয়েছে। ২৫ ও ২৬ জুলাই থেকে ফের বন্যার শংকা রয়েছে।