'আমরার আব্বা মনে করছিন পুরা টেহাডা পাইলে কুরবানিত শরিক অইবো। কিন্তু ৯ হাজার টেহার মধ্যে মাত্র চার হাজার টেহা দিছে। বাহি টেহা হেইল্যা নিছে গা।
পরে হুনছি আমরার টেহা দিয়া বুলে হেইল্যা কুরবানি দিছে'- ঈদের আগে নিজের প্রাপ্য প্রতিবন্ধী ভাতার মোট টাকা না পেয়ে এভাবেই ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমের বিরুদ্ধে কথাগুলো বলেন, শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মাসুদ মিয়া (১৮)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের কাঁঠালভাঙ্গা উত্তর রসুলপুর গ্রামে।
একই কায়দায় টাকা নিয়েছেন আরেক প্রতিবন্ধী নয়ন মিয়ার কাছ থেকেও। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে পাওয়া যায় দুই প্রতিবন্ধীকে। তাঁদের মধ্যে নয়ন মিয়া হচ্ছে আব্দুল মান্নানের ছেলে ও মাসুদ মিয়া আবুল কাশেমের ছেলে।
মাসুদ মিয়ার বাবা আবুল কাশেম জানান, ঈদের আগে ররিবার (২৬জুলাই) নান্দাইল সদর সোনালী ব্যাংক শাখায় ছেলেকে নিয়ে যান ভাতার টাকা উত্তোলনের জন্য। ব্যাংকের ক্যাশ থেকে ছেলের হাতে মোট নয় হাজার টাকা দেয়। পরে ব্যাংকের বাহিরে এলে পূর্ব থেকে অবস্থান করা ওই ইউনিয়নের ২,৩ ও ৪নম্বর ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগম।
তিনি তাঁর কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নিয়ে ছেলের হাতে ধরিয়ে দেন ৪ হাজার টাকা। এ সময় প্রতিবাদ করলে কার্ড কেড়ে নেওয়ার হুমকী দেয়। একই কথা বলেন, আরেক প্রতিবন্ধী নয়ন মিয়ার বাবাও। তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা।
কেন টাকা নেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি (ইউপি সদস্য) অফিস ও চেয়ারম্যানের খরচের কথা বলেন। দিতে না চাইলে এইবারই শেষ বলে হুমকী দেয়। ঘটনাস্থলে অবস্থান করার সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অনেক নারী-পুরুষ জড়ো হন।
তাঁরা এ ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করে বলেন, এই নারী কার্ড দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন হলে টাকা ছাড়া দেন না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি শুধু চেয়ারম্যানের হুকুম পালন করেছি।
তিনি এই টাকা কি করেছেন তা আমার জানা নেই। তবে চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক জানান, এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন সামনে আসায় একটি চক্র তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তবে তিনি সংবাদ না প্রকাশের জন্য অনুরোধ করে বলেন, আমি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
নান্দাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, এসব ন্যাক্কার জনক ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।