সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান।
এদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখায় বাংলাদেশ পুলিশের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের জান-মাল এবং সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। সচেতন মহল অবশ্যই স্বীকার করবেন প্রায় দেড় দশক আগেও এদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত ছিলেন, প্রতিনিয়ত চাঁদা দিতে হতো শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে ।সেই সকল সন্ত্রাসীদেরকে দমন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এদেশের অগ্রযাত্রার পিছনে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাড়ায়- জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কিন্তু অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশ পুলিশ এই জঙ্গিদেরকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে -অন্যথায় এ দেশ কিন্তু একটা ভঙ্গুর এবং জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হতো।
এক সময় গ্রামগঞ্জে এবং শহরের বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও স্বর্ণের দোকানে প্রায়ই সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতি হতো ।সেই সমস্ত ডাকাতদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে আজকে গৃহ ডাকাতি/ স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি/ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি বন্ধ করার পিছনে কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের অবদান অবিস্মরণীয়।
গ্রামে-গঞ্জে -শহরে বাসা বাড়িতে প্রচুর চুরি বিগত দিনগুলোতে হতো, এখনো হয়, সুযোগ পেলে বাসা বাড়ি গুলোতে প্রচুর পরিমাণে চুরি হয় কিন্তু এদেরকে নিয়ন্ত্রণ, গ্রেপ্তার ও আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা কাজ করে। এমনিভাবে হাজারো দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাবে যেখানে রয়েছে পুলিশের ব্যাপক সফলতা এবং সফলতা।
এখনো এদেশের মানুষ নিশ্চিন্তে চলাফেরা করেন ,নিশ্চিন্তে ঘুমান শুধুমাত্র বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণে ,কারণ পুলিশ আপনাকে পাহারা দেয় রাত জেগে ।আপনি যখন ঘুমান সেই পুলিশ কিন্তু আপনার বাসা বাড়ির নিরাপত্তা, আপনার জানের নিরাপত্তা এবং আপনার সম্পদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
দেশের যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে সাধারণ মানুষের পাশে সব সময় যে প্রতিষ্ঠানটি থাকে সেই প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ পুলিশ।সর্বশেষ এই করোনা কালীন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ যে আত্মত্যাগ এবং মানবিকতা দেখিয়েছে এটা মনে হয় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিসম্প্রতি কক্সবাজারে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা পুলিশের হাতে অত্যন্ত দুঃখজনক ভাবে নিহত হওয়ার পরে সে ঘটনাটি আমাদের ফেইসবুক এবং সাংবাদিক বন্ধুদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে করে সমগ্র পুলিশবাহিনীকে দায়ী করা হচ্ছে। পুলিশকে জনগণের অনাস্থার জায়গায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে- তার সুফল এবং কুফল কি হতে পারে এটা সচেতন মহল বিবেচনা করছেন কি?
দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একমাত্র পুলিশী সেবা সবচেয়ে সহজলভ্য। বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে তার কর্মপরিকল্পনাকে ঢেলে সাজিয়েছে এবং পুলিশি সেবা যেভাবে জনগণের কাছে সহজতর করা হয়েছে, সহজলভ্য করা হয়েছে, জনগণের বাড়ি বাড়ি পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে -এই রকম আর কোন প্রতিষ্ঠানে আছে যার সেবাকে এমনভাবে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সহজ করা হয়েছে?
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি যখন অন্য কোন দপ্তরে কোন সেবা প্রত্যাশী হিসেবে যাই, এরকম সহজ সেবা আমি আমার জীবনে কোথাও পাইনি, এখনো পাচ্ছিনা আর ভবিষ্যতেও খুব সহজে পাব বলে আমি অতটা আশা করি না। আজকে থানাগুলোকে দালাল মুক্ত করে- অসহায় গরিব মানুষ থেকে শুরু করে সকল মানুষকে থানাপুলিশ সাদরে যখন সেবা দিচ্ছে সেই সময়ে কক্সবাজারের ঘটনা পুলিশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু সেই ঘটনার দায় সমগ্র পুলিশ বাহিনীর উপর চাপিয়ে দেওয়া অতি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিনা?
যারা ঘটনাটাকে নিয়ে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশ কে হেয় করতে চান, বাংলাদেশ পুলিশের কর্ম পরিধিকে ছোট করে নিয়ে আসতে চান, যারা দেশের সাধারণ মানুষকে এই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন এবং দেশের স্বনামধন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাদের আসল উদ্দেশ্যটা কি? সচেতন মহল একটু বিবেচনা করবেন দয়া করে।
বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান ড: বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ,পুলিশ প্রধান হিসেবে যোগদান করার পর পুলিশ বাহিনীর আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুর্নীতি বন্ধ করা এবং পুলিশকে আরো জনমুখী/ গণমুখী করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাথে সাথে বাংলাদেশকে মাদক মুক্ত করার একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন -সেই চ্যালেঞ্জে তিনি বাংলাদেশের সকল পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং সারা বাংলাদেশের সকল পুলিশ যখন এই কাজটা কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজকর্ম শুরু করেছেন ঠিক এই সময়ে কক্সবাজারের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশের জন্য অবশ্যই একটা বড় ধরনের ধাক্কা বলে আমি মনে করি ।কিন্তু যারা এই ঘটনাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন এবং দেশের আভ্যন্তরীণ সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা কি পক্ষান্তরে মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, অসাধু ব্যক্তি, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসীদেরকে উসকে দিচ্ছেন কিনা -একটু দয়া করে ভাববেন কি?
পরিশেষে এটুকু বলতে চাই বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য এই সমাজ থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষ । সমাজে যেরকম ভালো এবং খারাপ মানুষের সংমিশ্রণ আছে ,তেমনি ভাবে সরকারি- বেসরকারি প্রত্যেকটা জায়গায় ভালো এবং খারাপ মানুষও আছে ।তেমনি ভাবে বাংলাদেশ পুলিশেও ভালো- খারাপ আছে। তাদেরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, খারাপদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা -যেমন সময়ের দাবি তেমনি ভাবে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা, সমাজের মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা এবং আগামী প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক, সৎ এবং সুনাগরিক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি, তবেই দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আশা করা যায়।
সর্বশেষে বলি, কক্সবাজারের ঘটনা অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সুষ্ঠু এবং সঠিক বিচার আমিও ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাশা করি। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা ভিন্নরূপ আশা করছেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে হেয় করার প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন, মনে রাখবেন এই পুলিশ আপনার প্রকৃত বন্ধু, এই পুলিশ আপনার দুর্দিনের সহযাত্রী, এই পুলিশ মানবিক পুলিশ ,এই পুলিশ আছে বলেই ব্যবসায়ীগণ নিরাপদে ব্যবসা করছেন ,পর্যটকগণ নিরাপদে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারছেন, ক্রেতাসাধারণ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদে গিয়ে কেনাকাটা করে মালামাল নিয়ে বাসায় ফিরছেন এবং নির্বিঘ্নে রাতে বাসায় ঘুমাতে পারছেন।
ঈদ এবং বিভিন্ন পূজা পার্বণে আপনি যখন পরিবারের সাথে সুন্দর করে সময় কাটান, সেই সময় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিজ পরিবার ছেড়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সুতরাং আসুন ঢালাওভাবে বাংলাদেশ পুলিশকে গালি দিয়ে, হেয় করে কথা না বলি।
আমিও আপনাদের মতই একজন সাধারণ নাগরিক। পুলিশরা আপনাদের থেকেই উঠে আসা আপনার সমাজেরএকজন নাগরিক।
আসুন অন্যকে দোষারোপ করার আগে নিজের চেহারাটা একটু আয়নায় দেখে নিই তবেই সমাজে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসবে।