December 11, 2024, 9:28 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভাঃ ডক্টর কামাল ছাড়া বেঁচে নেই কেউ!

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, আগস্ট ১৪, ২০২০
  • 739 দেখুন

সোহেল সানি

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীদের জীবন ও পরিণতি সত্যিই ঘটনাবহুল। সর্বশেষ বাকশাল মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য জন্ম দিয়েছেন তুমুল বিতর্কের। তাদের সর্বসম্মতিক্রমেই মোশতাক মন্ত্রিসভায় প্রণীত হয় কালো আইন ইনডেমনিটি। যা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে বৈধতা দেয়। আর এই মন্ত্রিসভা থাকাকালেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

আর এ হত্যা সংঘটিত হয় সরকারের ৮১ দিনের মাথায় ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের সরাসরি নির্দেশে। মোশতাকের পতন ঘটেছিল আরও ৩ দিন পরে। কিন্তু জাতি দেখতে পায়নি জাতীয় চার নেতা হত্যার পর মোশতাক মন্ত্রিসভা থেকে একজন সদস্যকেও পদত্যাগ করতে! অথচ, মোশতাকের পতনের পর এরাই আবার আওয়ামী লীগে সক্রিয় হলেন।

নেতৃত্বের শিখরে অবতীর্ণ হলেন। সকলেই পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ বটে। মনীষীদের কথাই সত্য। মানসিক বন্ধনও অনেক সময় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা বিবেকের দংশন। মানসিক দ্বন্দ্ব থেকেই তৈরি হয় উৎকন্ঠা এবং এক ধরনের অপরাধবোধ। তখন জেনে-বুঝেই আদর্শচ্যুতি ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক নেতাদের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। লাশ ফেলে রেখেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরদের দেখাগেছে আদর্শচ্যুত হতে। প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় দুটি স্তরে। প্রথমত, ব্যক্তি নিজের কাজকে পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছেন না। একইভাবে আবার মেনেও নিতে পারছেন না যে, সব বিকল্প খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই ধরনের পরিস্থিতি ক্রমে তার মাঝে এমন ধারণার জন্ম দেয় যে, নিজের পথটিই অপেক্ষাকৃত ভালো, কিংবা অন্য বিকল্পের সঙ্গে সে পথের তথাত নেহাতই সামান্য। এর অর্থ নিজের মননশীলতা হ্রাস পাওয়া, যার ফলে ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে আসে অনুভূতি। নিজস্ব অনুভূতি, ধ্যানধারণা থেকে এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করলে ঘটে সৃজনশীলতার মৃত্যু।

বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরা খুনী মোশতাকের মন্ত্রীত্বগ্রহণের মাধ্যমে সেদিন সৃজনশীলতারই মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন। কেউ কেউ মোশতাকের টোপ গিলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মানসিক বন্ধনকেও ছিন্ন করেছিলেন। যে কারণে দেখা গেছে পরিস্থিতি বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই দ্রুত মত বদলাতে থাকেন।

তারা রাতারাতি আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সারিতে ঠাঁই নেন। এমনকি তারা দলবদলে গা ভাসিয়ে বিএনপি-জাতীয় পার্টির মন্ত্রী এমপিও হন। আবার মরার আগে অনুকম্পা লাভ আওয়ামী লীগেও ফেরার সুযোগ পান। যাই হোক বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল বেঁচে আছেন ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেন।

বাকীরা ইতিমধ্যে পরলোকগমন করেছেন। ডঃ কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে বিদেশ সফরে ছিলেন। ১৯৮১ সালে ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ডঃ কামাল। ১৯৯২ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হারানোর পর আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন।

তিনি গণফোরাম সভাপতি। সরকারের কিছুদিনের জন্য উপমন্ত্রী হওয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামও রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরই মন্ত্রীত্ব করেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। সর্বশেষ তিনি বাকশাল সরকারের পানি পশুসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার রাতে তাঁর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতেও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। তাতে সেরনিয়াবাত একপুত্র, এককন্যা ও একনাতিসহ নিহত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৮১ দিনের মাথায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় বাকশাল সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, বাকশাল সরকারের প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী ও শিল্পমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে।

অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। “কে কবে মারা গেছেন?” খন্দকার মোশতাক খন্দকার মোশতাক আহমেদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পরই খুনীদের ঘাঁড়ে চড়ে রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন। ছিলেন বাকশাল সরকারের বানিজ্য মন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরই মোশতাক মন্ত্রীত্ব করেন। বাকশালেও তার অবস্থান ছিলো চার নম্বরে। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্তের দায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। মুজিব নগর সরকার থেকে ছিটকে পড়ার প্রতিশোধ গ্রহণ করেন জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে।

১৯৭৬ সালে তার পল্টনের জনসভায় সাপ ও বোমার কারণে দুইজন সাংবাদিকসহ ৯ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পর মোশতাক রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ায়। আগামসী লেনের বাড়িতে রোগভোগে তার মৃত্যু ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও জেলহত্যা মামলার বিচার শুরুর আগেই ১৯৯৫ সালে মোশতাক ইন্তেকাল করে।

বিক্ষুব্ধ জনতা তার নামাজে জানাযা পড়াতে দেয়নি বায়তুল মোকাররম মসজিদে। দাউদকান্দিত পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। বঙ্গবন্ধু তিনজন শিক্ষাবিদকে সরকারের অবস্থান দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চেয়েছিলেন। এরা হলেন বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও ডঃ আজিজুর রহমান মল্লিক।

” ডঃ মোজাফফর” বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ১৯৭৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ৫৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লায় জন্মনেয়া মোজাফফর আহমদ মোশতাকেরও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। “আজিজুর রহমান মল্লিক’আজিজ রহমান মল্লিক পরিচিত ছিলেন এ আর মল্লিক হিসেবে।

১৯১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি বাকশাল সরকারের ন্যায় মোশতাক সরকারেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান। “আবু সাঈদ চৌধুরী” বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মনেয়া বিচারপতি সাইদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসাবে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বিশিষ্ট ভুমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগও করেন।

১৯৭৫ সালের ৮ আগস্ট বাকশালে যোগ দেন এবং ওদিনই নৌ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ঘটে। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী মোশতাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী লন্ডনে ইন্তেকাল করেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম১৯২৫ সালে কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর সাংবিধানিকভাবে তাঁরই যেখানে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের কথা, সেখানে তাঁকে নিক্ষিপ্ত হতে হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হবার পর শিল্পমন্ত্রী করেছিলেন।রাষ্ট্রপতি মোশতাকের নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

তাজউদ্দীন আহমেদ একইভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে। ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই জন্ম নেয়া তাজউদ্দীন আহমেদ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলে তাজউদ্দীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হন।

১৯৭৩ সালের “ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশ রসাতলে যাচ্ছে” মর্মে মন্তব্য করায় তাঁকে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়। সেই থেকে তিনি রাজনীতির দূরে ছিলেন। বাকশালেও তাঁর কোন অবস্থান ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খুনী মোশতাকের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অর্থ মন্ত্রী এম মনসুর আলী ১৯১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাকশাল সরকারের প্রধানমন্ত্রীই শুধু নন, বাকশালের মহাসচিবও ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাক তাঁকে প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দিলে ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

ফলে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হতে হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদশায়। কামরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন এ এইচ এম কামরুজ্জামান। ১৯২৬ সালের ২৬ জুন রাজশাহীতে জন্ম নেয়া কামরুজ্জামান ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছিলেন বাকশাল সরকারেরও অন্যতম মন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাকের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ উল্লাহ ‘৭৪ সালের ২৭ নভেম্বর স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ রাষ্ট্রপতি হন। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী পদত্যাগের পর স্পিকার পদ থেকে মোহাম্মদউল্লাহ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে ভূমিমন্ত্রী করা হয় মোহাম্মদ উল্লাহকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেই মোহাম্মদ উল্লাহ খন্দকার মোশতাকের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯২১ সালের ২৯ অক্টোবর নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ উল্লাহ মোশতাকের পতনের পর আর আওয়ামী লীগে ফেরেননি।

বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি হন এবং জিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কিন্তু দুদিনের মাথায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আসে এরশাদের সামরিক শাসন। ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদ উল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল মালেক উকিল ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মুখে আবদুল মান্নানকে সরিয়ে ১৯৭৩ সালের ১৬ মার্চ তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়।

কিন্তু মোহাম্মদউল্লাহ রাষ্ট্রপতি হলে ১৯৭৪ সালের ১৭ নভেম্বর আবদুল মালেক উকিলকে করা হয় স্পিকার। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একদলীয় রাষ্ট্রপতির শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকশাল হলে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য নিযুক্ত হন স্পিকার আবদুল মালেক উকিল।

১৯২৪ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণকারী মালেক উকিল বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে প্রাপ্তির হিসাবটা ব্যাপক ও বিস্ময়কর। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু এবং চারনেতা হত্যার পরও স্পিকারের পদ আঁকড়ে থাকেন এবং একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান শেষে লন্ডনে এক সম্মেলনে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্পর্কে বলেন ‘দেশ ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।’

১৯৮৩ সালে তার আরও একটি উক্তি আওয়ামী লীগে ঝড় তোলে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে বলেন, “বংশানুক্রমে নেতা হওয়ার সুযোগ নেই, থাকলে সোহরাওয়ার্দীর কন্যা বেগম আখতার সোলাইমান হতেন আওয়ামী লীগের প্রধান।” ১৯৮৩ সালে যে ৬ নেতা আওয়ামী লীগ হতে বহিষ্কার হন, তার মধ্যে আবদুল মালেক উকিল ছিলেন অন্যতম।

পরে নতজানু হয়ে তিনি আওয়ামী লীগে পদ টিকিয়ে রেখেছিলেন। যাহোক বঙ্গবন্ধুকে ফেরাউনের সঙ্গে তুলনা করে বিষোদগার করার পরও ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চের কাউন্সিলে আব্দুল মালেক উকিল কি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন আগামী প্রজন্মের কাছে থেকে যাবে। ‘৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে মালেক উকিল নোয়াখালীর নিজ আসনে পরাজিত হন।

ফলে বিরোধী দলীয় নেতা হবার নিশ্চিত সম্ভাবনা ভেস্তে যায়। পরে আসাদুজ্জামান খান বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর আবদুল মালেক উকিল ইন্তেকাল করেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য মারা যান।

আসাদুজ্জামান খান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খান বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন। মোশতাকের মন্ত্রীত্ব গ্রহণের কারণে তিনি আওয়ামী লীগে সমালোচিত ছিলেন। ১৯১৬ সালে বৃহত্তম ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী আসাদুজ্জামান খান ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির লাইমলাইটে উঠে আসেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হবার মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক উকিল নোয়াখালীতে নিজ আসনে হেরে যাওয়ায় বিরোধ দলের নেতা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছে আসাদুজ্জামান খানকে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত করে।

সোহরাব হোসেন ১৯২১ সালে যশোরে জন্ম নেয়া সোহরাব হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন। সমালোচিত ছিলেন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে। মোশতাকের পতনের পরে সোহরাব হোসেন আওয়ামী লীগে টিকে থাকলেও শীর্ষ পদে আসীন হতে পারেননি। ১৯৯৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

শামসুল হক ১৯২৭ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণকারী শামসুল হক বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী ১৯২৩ সালে দিনাজপুরে জন্ম নেয়া অধ্যাপক ইউসুফ আলীও খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রী হন। বাংলাদেশের সংবিধানে যে “ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র” সন্নিবেশিত রয়েছে, তার স্বাক্ষরদাতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

মোশতাকের পতনের পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামী লীগ (মিজান) গঠিত হলে সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। অচিরেই তা ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন। সর্বশেষ তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মৃত্যু ঘটে।

আবদুল মান্নান মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়া আবদুল মান্নান বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বাকশাল মন্ত্রিসভায় সদস্য হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯২৯ সালের ৭ অক্টোবর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী আবদুল মান্নান বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন।

মোশতাকের পতনের পর তিনি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এবং বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলেও বাদ পড়েন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মান্নান। ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মান্নান ইন্তেকাল করেন।

আব্দুল মমিন “মোশতাক মন্ত্রিসভার সদস্যদের শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হবে না” মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে বাদ পড়েন আরেক নেতা আবদুল মমিন। ১৯২৯ সালে নেত্রকোনায় জন্ম নেয়া মমিন বঙ্গবন্ধু সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি মোশতাকেরও খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৬-১৯৭২ সাল পর্যন্ত আবদুল মমিন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন।

মোশতাকের পতনের পর তিনিও আওয়ামী লীগে শীর্ষ পদে আসীন হন। বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির আসনও অলংকৃত করেন এ নেতা। ২০০৪ সালের ১৬ জুলাই মৃত্যুবরণকারী আবদুল মমিন ২০০২ সালের কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম পদ হারান। বর্তমানে তার আসনের এমপি পতœী রেবেকা মমিন। মনোরঞ্জন ধরবঙ্গবন্ধু সরকারের সর্বাপেক্ষা বয়স্ক মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর ১৯০৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে যে ‘ইনডেমনিটি’ আইন দিয়ে বৈধতা দেয়া হয়েছিল, সেই বহুল বিতর্কিত কালো আইনের প্রণেতা মনোরঞ্জন ধর। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আইন ও বিচার মন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশতাকের আদেশে এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ বাকশাল মন্ত্রিসভায়ও আইন মন্ত্রী ছিলেন মনোরঞ্জন ধর।

পাকিস্তান অভ্যুদয়ের পর জাতীয় কংগ্রেস নামে একটি দলের নেতা হন তিনি। পরে যোগদেন আওয়ামী লীগে। ২০০০ সালের ২২ জানুয়ারি তার মহাপ্রয়াণ ঘটে। মোল্লা জালাল বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমেদ। ১৯২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারী গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মিজান চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুরে জন্মগ্রহণকারী মিজানুর রহমান চৌধুরী বঙ্গবন্ধু সরকারের তথ্য মন্ত্রী ছিলেন বেশকিছু দিন। পরে ত্রান মন্ত্রী হন। তবে বাকশাল মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিতকরণে সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রাখেন মিজান চৌধুরী। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের সময় দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বপালন করেন এ নেতা। আব্দুল মালেক উকিল আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে পাল্টা তিনিও আওয়ামী লীগের কমিটি করেন। পরবর্তীতে জনদলে যোগদিয়ে এরশাদের মন্ত্রী হন। সর্বশেষ এরশাদের প্রধানমন্ত্রীও নিযুক্ত হন। এরশাদ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন মিজানুর রহমান চৌধুরী।

পরে পাল্টা জাতীয় পার্টিও করেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগে ফিরে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হন। ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক ইন্তেকাল করেন। কোরবান আলী বঙ্গবন্ধু সরকারের তথ্য মন্ত্রী ছিলেন এম কোরবান আলী। আওয়ামী লীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। ১৯২৪ সালে মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী কোরবান আলী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।

পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে এরশাদের মন্ত্রীত্বগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালের ২৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন। আব্দুস সামাদ আজাদ বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাকশাল সরকারের কৃষি মন্ত্রী ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আব্দুস সামাদ আজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সংসদ উপনেতা নির্বাচিত করেন।

তার আগে বিরোধী দলের উপনেতাও ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। শেখ আজিজ বঙ্গবন্ধু সরকারের তথ্য মন্ত্রী ছিলেন শেখ আব্দুল আজিজ। ১৯২৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই নেতা ছাত্রলীগেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাকশাল মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ভাষাসৈনিক এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন।

মমিন তালুকদার আবদুল মমিন তালুকদার বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯২৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি আব্দুল মমিন তালুকদার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন দীর্ঘদিন।১৯৯৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বায়তুল্লাহ প্রথম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন বায়তুল্লাহ।

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী। ১৯ ৮৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এম আর সিদ্দিকী ১৯২৫ সালের ১ মার্চ জন্ম নেয়া মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু সরকারের বেশকিছু দিন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ইন্তেকাল করেন। ড. মফিজ চৌধুরী ১৯১৯ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী ড. মফিজ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু সরকারের বেশকিছু মন্ত্রী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর রাজনৈতিক পদচারণা ছিল না। ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন মফিজ চৌধুরী।আব্দুর রউফ প্রথম জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি আব্দুর রউফ। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি মারা যান। ফণিভূষণ মজুমদার ১৯০১ সালে ফরিদপুরে জন্ম নেয়া ফণিভূষণ মজুমদার বঙ্গবন্ধু সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী ছিলেন।

সর্বাপেক্ষা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ফণিভূষণ মোশতাক সরকারেরও এলজিআরডি মন্ত্রী হন। বাকশালেরও নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩১ অক্টোবর তার প্রয়াণ ঘটে। জহুর আহমেদ চৌধুরী ১৯১৬ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী জহুর আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে শ্রম সম্পাদক ছিলেন ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত।

বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথমে শ্রম এবং পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই ইন্তেকাল করেন। বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯২৪ সালে জন্ম নেয়া বদরুন্নেসা আহমেদ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম মহিলা মন্ত্রী। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শুধু নন, বদরুন্নেসা আহমেদ মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী।

১৯৭৪ সালের ২৫ মে তিনি মারা যান। নূরজাহান মুর্শেদ বঙ্গবন্ধু সরকারের মহিলা ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ডঃ নুরজাহান মুর্শেদ। ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণকারী এ নেত্রী ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বাকশাল মন্ত্রিসভায় কোন নারী সদস্যই ছিলেন না। নূরুল ইসলাম চৌধুরী অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯২৫ সালে।

বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগদান করে বিতর্কিত হন। ১৯৯৫ সালের ৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। দেওয়ান ফরিদ গাজী ১৯২৫ সালের ১ মার্চ সিলেটে জন্ম নেয়া দেওয়ান ফরিদ গাজী বঙ্গবন্ধু সরকারের বানিজ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। খন্দকার মোশতাক সরকারেরও বানিজ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় বিতর্কিত ছিলেন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও কোনঠাসা ছিলেন। ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। কে এম ওবায়েদ কেএম ওবায়দুর রহমান। ১৯৪০ সালের ৫ মে ফরিদপুরে জন্ম নেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মোশতাক সরকারেরও প্রধানমন্ত্রী। জেলহত্যা মামলার আসামী ছিলেন। অনেকে আওয়ামী লীগে ফেরার সুযোগ পেলেও কে এম ওবায়দুর রহমান বিএনপিতে যোগ দিয়ে জিয়ার মন্ত্রী হন।

পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতির লাইম লাইটে উঠে আসেন। ১৯৮৭ সালে বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে। পরে তিনি জনতা দল গঠন করলেও পরে আবার বিএনপিতে ফেরেন। তবে আর মন্ত্রীত্বলাভে ব্যর্থ হলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি কে এম ওবায়দুর রহমান আওয়ামী লীগের এক সময় সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন।

মোসলেম উদ্দিন খান মোসলেম উদ্দিন খান বঙ্গবন্ধু সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মোশতাক সরকারের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তার জন্ম। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন মোসলেম উদ্দিন খান। ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ক্ষীতিশ মন্ডল। মোশতাক সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।

২০২০ সালের ৯ মার্চ মহাপ্রয়াণ ঘটে এ নেতার। নূরুল ইসলাম মঞ্জুর বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আবার মোশতাক সরকারের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৬ মে। জেলহত্যা মামলার আসামী ছিলেন এ নেতা। ২০২০ সালের ২৬ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাহের উদ্দিন ঠাকুর বঙ্গবন্ধু সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর। কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী তাহের উদ্দিন ঠাকুর মোশতাক সরকারেরও তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।

জেলহত্যা মামলার আসামী ছিলেন। ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ইন্তেকাল করেন। শাহ মোয়াজ্জেম বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী হন। মুন্সিগঞ্জে জন্ম নেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি। মোশতাকের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ডেমোক্রেটিক লীগ গঠনে ভূমিকা রাখেন।

পরে মোশতাককে ছেড়ে দেন জেল হত্যা মামলার এ আসামী। জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রথমে এরশাদের মন্ত্রী এবং পরে উপপ্রধান মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ছাত্রলীগের এককালীন সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন। পাল্টা জাতীয় পার্টি গঠন করলেও সর্বশেষ তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ লাভ করেন নি।

ভোলা মিয়া রিয়াজুদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিতে যোগদান করে মন্ত্রী হন। জিয়া নিহত হবার পর এরশাদের মন্ত্রীত্বলাভ করেন। ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া ইন্তেকাল করেছেন।

তোফায়েল আহমেদ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণকারী তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। শেখ হাসিনা সরকারের দশ বছর মন্ত্রীত্ব করেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

তার আগে ১৯৮১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ বীর ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিদান করেন। বর্তমানেও তিনি এমপি।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102