নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় দুই দিনে পৃথক ঘটনায় তিনজন এনজিও কর্মীকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে দুস্কৃতিকারীরা। ঘটনা দু’টি ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওই দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
পর পর দুই দিনে তিন এনজিও কর্মীকে কোপানোর ঘটনায় এনজিও কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করেছিল। তবে দুই দিনেই ঘটনা ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করায় সেই আতঙ্ক কেটে গেছে তাদের।
ঘটনার সাথে সাথে আসামী গ্রেফতার করায় ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মোস্তাফিজার রহমানকে ধন্যবাদ জানান, বিভিন্ন এনজিও’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
জানা গেছে, রবিবার (১৬ আগষ্ট) দুপুর এক টার দিকে উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের চাকধা পাড়া এলাকায় আশা এনজিও’র মাঠকর্মী সিরাজুল ইসলাম (৪৮) ও আলিফ হোসেন (৩৩) কে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মাদকসেবী মোস্তাকিম পালিয়ে যায়।
ঘটনার সাথে সাথেই ডোমার থানার পুলিশ চারটি দলে ভাগ হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। পুলিশ মোস্তাকিমের বর্ণনা দিয়ে চারিদিকে সোর্স লাগিয়ে দেয়। সোর্সদের তথ্যে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অভিযান চালালেও মোস্তাকিম পালিয়ে যায়।
সে প্রতিমুহুর্ত তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। রাত আট টার দিকে মোস্তাকিম জয়ডাঙ্গা এলাকায় অবস্থান করছে পুলিশ সংবাদ পেলে, চারিদিক থেকে পুলিশের সদস্যরা আসতে থাকে। পুলিশকে দেখে মোস্তাকিম রাস্তা থেকে নেমে ধান ক্ষেত দিয়ে দৌড় দেয়।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, এসআই কমলেশ রায়, এএসআই আনোয়ার হোসেন, মঞ্জুরুল হোসাইন ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার সাত ঘন্টার মধ্যেই আসামী গ্রেফতার হওয়া খুশি অন্যান্য এনজিও কর্মীরা।
এদিকে, পরদিন সোমবার (১৭ আগষ্ট) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের ঋষিপাড়া এলাকায় বে-সরকারী সংস্থা ব্র্যাকের মাঠকর্মী পুলু রহমানকে (৩৫) এলোপাতারি কোপিয়ে ওই এলাকার মাদকসেবী সুকুমার ঋষি (৩০) পালিয়ে যায়।
পুলিশ সদস্যরাও তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ততক্ষনে সুকুমার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করছিল। প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। ঘটনার সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে দুপুর দেড় টার দিকে মেলাপাঙ্গা হতে এলাকাবাসীর সহায়তায় সুকুমারকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
সুকুমার ঋষিপাড়ার গনেশ ঋষির ছেলে। আহত এনজিও কর্মীরা বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। বে-সরকারী সংস্থা আশা’র সোনারায় ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম ও ব্র্যাকের ইউপিসি প্রকল্পের শাখা ব্যবস্থাপক সনাতন রায় জানান, পর পর দুই দিনে তিন জন এনজিও কর্মী সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘতে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এতে আমরা এনজিও’র কর্মীরা প্রথমে নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম। তবে ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আসামীদের পুলিশ গ্রেফতার করায়, এখন আর নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে না। এজন্য ডোমার থানার ওসি সাহেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়।
ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান জানান, ঘটনা দু’টি ঘটার সাথে সাথেই ডোমার থানার আমরা সকল পুলিশ সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসামীদের গ্রেফতার করেছি। আমি অপরাধীদের উদ্দ্যেশ্যে বলবো ডোমারে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বিপিএম পিপিএম জানান, দুই দিনে তিন এনজিও কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার বিষয়টি খুবেই দুঃখজনক। তবে আসামীদের সময়ের মধ্যেই আমরা গ্রেফতার করেছি। সাধারন মানুষের নিরাপত্তা দিতে আমরা পুলিশ সদস্যরা সবসময় তৎপর রয়েছি।