প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ২:৩৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ৩০, ২০২০, ২:৪৫ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জ জেলা মাধবপুর উপজেলায় ইয়াবা নাটক সাজিয়ে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের ফন্দি ভন্ডুল করে দিয়েছে জনতা। এই ঘটনায় নানা আলোচনা সমালোচনা এখন মাধবপুর উপজেলা জুড়ে, ফার্নিচার ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুমের বাড়ি মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের এখতিয়ারপুর গ্রামে।
তিনি ব্যবসা করেন একই উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শাহপুর নতুন বাজারে। ব্যবসার পাশাপশি তিনি পরিবেশ দুষন রক্ষায় আন্দোলনের সাথে জড়িত। মাধবপুরের শিল্প এলাকায় মার লিমিটেড নামক একটি কোম্পানীর বর্জে এলাকার পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট করায় এলাকাবাসীদের সাথে ব্যবসায়ী কাইয়ুম প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
কাইয়ুম জানান শুক্রবার (২৮ আগষ্ট) বিকালে শাহপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মিলন (৩২) ও মুক্তার মিয়ার ছেলে জাবেদ (২৭) নামে দুই যুবক তার দোকানে যায়। তারা ফার্নিচার কেনার নামে দাম দর জিঞ্জাসা করতে থাকে। ১০/১৫ মিনিট অবস্থানের পর তারা দোকান থেকে বের হন। রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় মাধবপুর থানার সাদা পোষাকদারি তিন এসআই আহাদ, ইসমাইল ও এনামুল ব্যবসায়ী কাইয়ুমের দোকানে যান। ফার্নিচারের ব্যবসার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসার করছেন বলেই আর ঘরের কোথাও তল্লাশী না করে কাইয়ুমের দোকানের সাটারের নীচ থেকে একটি পরিত্যক্ত সিগারেটের প্যাকেট বের করে জানতে চান।
এর ভেতরে কি আছে কাইয়ুম কিছুই জনেন না জানালে পুলিশ সিগারেটের প্যাকেট খুলে ৪০টি ইয়াবা ট্যাবলেট দেখান। এনিয়ে পুলিশের সাথে তার তর্ক বিতর্ক শুরু হলে অন্যান্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জড়ো হন, তারা দাবি করেন কাইয়ুম ইয়াবা ব্যবসায়ী নন এছাড়া একজন পরিবেশবাদি। এমতাবস্থায় এসআই ইসমাইল একটি কাগজ বের করে জব্দ তালিকার জন্য দস্তখত করতে উপস্থিত, কয়েকজনকে অনুরোধ করেন এতে কেউ রাজি হননি তিন এসআই কাইয়ুমকে দোকানে রেখে।
উদ্ধার করা ইয়াবা নিয়ে চলে যেতে চাইলে স্থানীয় লোকজন তারা পুলিশ কি না চ্যালেঞ্জ করেন। মাধবপুর থানার ওসিকে বিষয়টি জানালো হলে এ এস আই বিল্লাল কয়েকজন কনষ্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। স্থানীয়দের তোপের মুখে এএসআই বিল্লাল ব্যবসায়ী কাইয়ুম ইয়াবা ব্যবসায়ী নন বলে মেনে নেন। কাইয়ুম কারোর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে স্থানীয়দের আশ্বস্থ করে তিন এসআইকে নিয়ে যান।
ঘটনার প্রতিবাদে রাতে এলাকাবাসী ট্রাকযোগে মাধবপুর থানায় হাজির হন। তারা ওসির বরাবরে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে ওই তিন এসআইয়ের নাম উল্লেখ করতে চাইলে ওসি ইকবাল হোসেন তা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। ফলে পুলিশের নাম বাদ দিয়ে কাইয়ুম ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে দুই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কাইয়ুম আরো জানান।
পরিবেশ দুষন করছে এ মর্মে মার কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। তিনি সন্দেহ করছেন মার লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তাকে নাজেহাল করার জন্য এলাকার কিছু খারাপ প্রকৃতির লোককে নিয়ে তাকেসহ অন্যান্য প্রতিবাদীদেরকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, ২৮-আগষ্টের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ ওসি ইকবাল হোসেন বলেন।
গোপনে খবর পাওয়া গিয়েছিল কাইয়ুম ইয়াবা ব্যবসা করছেন। কিন্তু পরবর্তী জানতে পারলাম মার কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কাইয়ুমের অভিযোগটির তদন্ত করা হচ্ছে। সাদা পোশাকে যাওয়ার কারন কি জানতে চাইলে ওসি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে তিনি জানান ওই তিন এসআই সাদা পোশাকে থাকলেও দূরে পোশাকদারি পুলিশ ছিল।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন মাদকের খবর পেলে তো পুলিশ ঘটনাস্থলে তো যাবেই। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে কাইয়ুম একজন ভাল মানুষ। তিনি ইয়াবার সাথে জড়িত নন। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন বলে কেউ তাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। এ ব্যাপারে বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয় পরিবেশ ও সমাজকর্মী আব্দুল কাইয়ুম শিল্পবর্জ্য দূষণের।
বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন কয়েক বছর ধরে। তার কণ্ঠ রোধ করার জন্য নানান সময় হুমকি ধমকি এমনকি মাদক বাবসায়ী সাজানোর অপচেষ্টা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক বছর ধরে অনেকগুলো শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে ঐসব শিল্প কারখানায় বেশিরভাগেরই কোন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর হয়নি।
বেশীর ভাগ কারখানা থেকেই তাদের বর্জ্য পদার্থ শোধনাগারের মাধ্যমে পরিশোধিত না করে উন্মুক্ত স্থানে অথবা খাল-বিল, নদীতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর কারখানার নিক্ষিপ্ত বর্যে পাশবরতি গ্রামসমূহের মানুষকে চরম দুগর্ন্ধময় ও দূষিত পানির সাথে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে । এ থেকে মুক্তির জন্য এলাকাবাসী এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আন্দোলন করতে হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তিনি নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, কাইয়ুম পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেন। তিনি জানান মার লিমিটেড তার কারখানা পরিদর্শন করে পরিবেশের ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য সরকারকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রিট করেছে। মার লিমিটেড পরিবেশ নষ্ট করছে তাই কারখানাটির গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করার জন্য
মার লিমিটেড ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে বেলার পক্ষ থেকে একটি আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে ২০১৫ সালে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে হবিগঞ্জ জেলার শিল্প কারথানার মালিকদের সাথে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আহবানে এক সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় পরিবেশ বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বাপার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন একাধিকবার তাগিদ দেওয়া।
সত্বেও ইটিপি চালু না করাায় মার লিমিটেডের কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। কিছুদিন বন্ধ রাখার পর মার লিমিটেড গোপনে তা চালু রেখে কারখানার বর্জ্য একটি খালের মাধ্যমে নদী ও হাওড়ে ছড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসীদের অভিযোগ।