হবিগঞ্জ জেলা চুনারুঘাট উপজেলায় প্রায় ৭০ বছর আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাল্লা নামক স্থানে স্থলবন্দর চালু করা হয়েছিল। কিন্তু নানান জটিলতায় কিছুদিন পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে আবার চালু হয় ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এই স্থলবন্দর।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের গড়িমসির কারণে স্থলবন্দর হিসেবে এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। বর্তমানে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হচ্ছে নৌকায় বা মাথায় করে। ১৯৫১ সালে চালু হওয়া এই স্থলবন্দর দুই দেশের সীমান্তকে বিভক্ত করা খোয়াই নদীর
কারণেই মূলত নজর কাড়তে পারেনি ব্যবসায়ীদের। মাঝেমধ্যে সিমেন্ট রসুন হদুল শুটকিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য এপার থেকে ওপার করে থাকেন। ফলে একদিকে ঝুঁকি অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল আধুনিকায়ন করা হলে এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো। কিন্তু দীর্ঘ ৭০ বছরেও বন্দরটি আধুনিকায়নের কোন লক্ষণই দেখছেন না স্থানীয়রা।
একের পর এক জটিলতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হবিগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের এই স্বপ্ন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জায়গা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান ঘটাতে বাল্লা ছেড়ে কেদারাকোট এলাকায় নজর দেয় দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সেই মোতাবেক ২০১২ সালের ১১ জুন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধিদল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন করে কিন্তু তখনও এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি পরবর্তীতে আবারও কয়েক দফা পরিদর্শন করেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন শেষে উভয়পক্ষই
কেদারাকোটে স্থলবন্দর করার ব্যাপারে একমত হয়। ২০১৭ সালে ৮ জুলাই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী হবিগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় জানান, ওই বছরে একনেক সভায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে। অবকাঠামো তৈরির জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়।
প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় আপত্তি জানান স্থানীয়রা এ অবস্থায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়াই। তবে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণে ভ‚মি জরিপ সম্পন্ন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে এলাকার প্রভাবশালীরা অধিক মুনাফার লোভে স্থলবন্দরের আশপাশের জমি ও অধিগ্রহণের আওতাধীন সব জমি আগেভাগে কম দামে কিনে নিয়েছেন।
এখন সেই জমির দাম কয়েকগুণ বেশি দাবি করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। যার কারণে বাল্লা বন্দর প্রতিষ্ঠা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে চুনারুঘাট-মাধবপুর আসনের সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, বাল্লা স্থলবন্দর হবিগঞ্জের জন্য বড় ধরনের একটি পাওয়া যার কাজ অচিরেই শুরু হবে।
করোনা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাজ চলবে। খুব দ্রুত জমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হবে। হবিগঞ্জের এডিসি (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন বাল্লা স্থলবন্দরের জায়গার দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে টাকা পেলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।