পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যপারে প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী,আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে ওই এলাকার এ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ আর্চায্য.কাজী ছাইফুদ্দিন শাহারিয়ার সোহাগ,শামীম হাসান,হুমায়ুন কবির,খলিলুর রহমান,হাফিজুর রহমান,মেহেদী হাসান,শ্যামল দত্ত ও সজিব তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
যার অনুলিপি সাংবাদিকদেরও দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী পৌরসভা "ক" শ্রেণির পৌরসভার অন্তর্গত। পৌরসভাটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পরে এ পৌরসভায় ৩২ টি ঠিকাদারী লাইসেন্স ছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়রের সীমাহীন দূর্নীতির কারণে এ পৌরসভায় বর্তমানে লাইসেন্স সংখ্যা মাত্র ৭টি।
তিনি পৌরসভার প্রায় ৯৫% কাজ মেসার্স মাহাবুব ট্রেডার্সের নামে নিয়ে নিজেই কাজ করে থাকেন। পৌরসভায় টেন্ডডার আহবান করলে প্রতি গ্রুপে ৩ বা ৪টি লাইসেন্সে কাজ ক্রয় দেখানো হয়। পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দের টাকা অন্য ঠিকাদারদের নাম মাত্র দিয়ে মেসার্স মাহাবুব ট্রেডার্সের নামে সিংহভাগ টাকা মেয়র নিজে নিয়ে নেন।
নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যদিও ইজিপি পদ্ধতিতে হয় তবু তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে পত্রিকার গোপনীয়তা রক্ষা করে পৌরসভার রেজুলেশন ছাড়া টেন্ডার করিয়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তার আপন ভাই মেসার্স হোচেন এন্ড ব্রাদার্স ছাড়া মেসার্স মাহাবুব ট্রেডার্স, মেসার্স তিষা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সঞ্জয় কনণ্ট্রাকশনের নামে নিয়ে নেন।
প্রতিটি কাজের সাথে তিনি অর্ধেক শেয়ার থাকেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে । এদিকে যেসব রাস্তা মাত্র ২/৩বছর পূর্বের করা হয়েছে তিনি সেই সমস্ত রাস্তা পূণঃ টেন্ডার করে নামমাত্র কাজ করিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। কাজগুলোর অতি নিন্মমানের কারণে ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনতার রোষানলেও পড়েন তিনি।
যা ওই সময় জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মেয়রের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে স্বরূপকাঠীতে মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেয়রের সীমাহীন দূর্নীতি এবং বিপুল অর্থ আত্মসাতের কারণে পৌরবাসী জিম্মি হয়ে আছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এদিকে যে রাস্তা চলাচলের জন্য সচল সে রাস্তাগুলো পূণঃ টেন্ডার করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যায় করছেন।
গুরুত্বপূর্ন নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ৪ গ্রুপের কাজ ৪ জন ঠিকাদারকে দিবে বলে তিনি ইতিমধ্যে চল্লিশ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি গত আগষ্ট মাসে যে রেজুলেশন দাখিল করেছেন তাহা বানোয়াট বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিধান অনুযায়ী চলতি মেয়রের রক্তের কোন ব্যাক্তি পৌরসভার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
অথচ স্বরূপকাঠী পৌরসভার বর্তমান মেয়রের বড় ভাই গোলাম মোঃ ফারুক'র স্বত্বাধিকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোচেন এন্ড ব্রাদার্সকে প্রতি টেন্ডারে নূন্যনতম একটি কাজ দেওয়া হয়ে থাকে। এদিকে শহর উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর ব্যাপি হলেও এ প্রকল্পের সমুদয় টাকা প্রকল্পের পি.ডি মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজোসে দেড় বছর মেয়াদের মধ্যে তুলে নেয়ার পায়তারা স্বরূপ টেন্ডার আহবান করেছেন।
ইতিমধ্যে এলজিইডি দপ্তরের (আই ইউআইডিপি) আওতার কয়েকটি সড়ক মেরামতের টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যায়ের ওই দরপত্রের মধ্যে চলাচল উপযোগি তিনটি সড়কের কাজ করানোর জন্য মোট অংকের ব্যায় ধার্য্য করে প্রকৌশলীদের দিয়ে ইচ্ছামাফিক প্রকল্প তৈরী করান মেয়র।
তারপর বরাদ্দের অর্ধেক অথবা তারচেয়েও বেশী লাভজনক সড়কগুলোর কাজ দেয়া হয় মেয়রের আপন ভাই গোলাম ফারুকসহ পছন্দের ঠিকাদারদের। এরমধ্যে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যায়ে কোর্ট বিল্ডিং থেকে বৌবাজার পর্যন্ত সড়কের (দুইটি লিংক রোডসহ) সড়কটি মেরামত কাজের কাজ দেয়া হয় তিশা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠনকে।
ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পুরাতন কার্পেটিং ট্রাক্টর দিয়ে (স্ক্রাইফিং) তুলে ফেলেন এবং তারপর পুরোনো মেকাডামের উপর নতুন কার্পেটিং করতে থাকেন। যদিও পুরোনো কার্পেটিংয়ের উপর নতুন করে ৬ ইঞ্চি ইটের খোয়ার মেকাডাম করার কথা রয়েছে। এছাড়াও সড়কের দুইপাশে নতুন ইটের এজিং (রাস্তার দুই পাশের বেড়া) দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি দেয়া হয়নি।
পুরোনো এজিং এর ওপর দেড় ইঞ্চি কার্পেটিং'র জায়গায় একইঞ্চি কার্পেটিং করে কাজ শেষ করছেন। এছাড়াও বিটুমিন জ্বালানোর ক্ষেত্রে কোনো মান নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা না করেই অতিরিক্ত তরল করে পাথরের সাথে মিশিয়ে কার্পেটিং করানোর কারনে নি¤œমানের কাজ করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
মেয়রের বড় ভাই গোলাম ফারুকের ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠান হোসেন এন্ড ব্রাদার্সকে দেয়া হয় দক্ষিণ স্বরূপকাঠীর গনমান খালের পাড়ের একটি সড়ক মেরামতের কাজ। ৪/৫ বছর আগে কার্পেটিং করা ওই সড়কটিতে মাত্র ৫/৭ লাখ টাকার গুড়া পাথরের সিলকোট কাজ করলেই সড়কটি দীর্ঘ মেয়াদী হতো। অথচ ওই সড়কটিতে নতুন প্রকল্প বরাদ্ধ করা ৫৮লক্ষ টাকার কাজেও একইভাবে লুটপাট করা হয়েছিল।
এরপূর্বে ২০১৮ সালে গনমান খালের উত্তর পাড়ের একটি সড়ক মেরামত কাজ করানো হয়। ৯৬ লাখ টাকা ব্যায়ে সঞ্চয় কনস্ট্রাকশন এর মাধ্যমে। সেখানে মাত্র ২৫/৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে বাকী টাকা আত্মসাত করা হয়। ওই কাজে মেয়র অংশীদার/শেয়ার ছিলেন বলে অত্র এলাকায় আলোচনা রয়েছে।
একইভাবে মেয়র গোপন টেন্ডার দিয়ে মেয়রের ঘনিষ্ট ব্যাক্তি মাহমুদ সালেকের ঠিকাদারী ফার্মের নামে অন্তত পক্ষে ১২/১৩টি কাজ করানো হয়। কাজের সীমাহীন দূর্নীতি করলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। তার পছন্দের ঠিাকাদারদের মাধ্যমে বিভিন্ন সড়ক মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
অভিযোগে দাবি করা হয় মেয়র তার নির্বাচনী হলফ নামায় যে সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেছেন তার সাথে তার বর্তমান সম্পদের বিবরণ অনুসন্ধান করলেই বুঝা যাবে কোন আলাউদ্দিনের চেরাগের ভিতর দিয়ে তিনি ঢাকায় একাধিক ফ্লাট, জমি, নিজ এলাকায় জমি, জাহাজ ক্রয় এবং ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি করেছেন।
তাকে আওয়ামীলীগের অনুপ্রবেশকারী কাউয়া বলে অভিহিত করে পূর্বে তিনি সর্বহারা নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যার জন্য আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহম্মেদ, প্রায়ত নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও এসপি মাহাবুব উদ্দিন সহ বঙ্গবন্ধুর মরনোত্তর বিচার চেয়ে মামলা কারি লিবারেল পার্টির প্রধান মহিউদ্দিনের স্বরূপকাঠী উপজেলার প্রতিনিধি ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির নিজেকে দেশের মধ্যে সবেচয়ে গরীব ও সৎ মেয়র দাবি করে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা,ভিত্তিহীণ ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন। শহর উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি মিজানুর রহমান ফোন রিসিভ না করায় প্রকল্পের কাজে অনিয়মের বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।