বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। করোনা মহামারীর ফলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির স্বাভাবিক না হওয়ায় একাধিক বার পেছানো হয়েছে ছুটির মেয়াদ।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ছ’মাস বাড়িতে অলস ও বিষন্নতাপূর্ণ সময় পার করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে অনেক শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) অনেকেই স্বাস্থবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়েছে, আবার কেউ কেউ ঝুঁকির আশঙ্কায় বিপক্ষেও মত দিয়েছেন।
এদিকে সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোল গঠন করা হয়েছিল। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে আন্দোলনেরও ডাক দিতে দেখা গেছে ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা চাই’ নামক একটি গ্রুপে।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। এমন্তাবস্থায় ক্যাম্পাস খোলা বা না খোলার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করছেন রায়হান ইসলাম-
সাদমান সাকিব নিলয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব নিলয় বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। সেটা ব্যক্তিবিশেষে বেশিরভাগই যৌক্তিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা। করোনাকালে যাদের অনেকেরই আর্থিক সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি কিংবা ছোটখাটো কোন কাজের মাধ্যমে সংসারের চাপ কমাতে সাহায্য করত। তাই আমার মতে,সার্বিক দিক বিবেচনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত হবে।
সুমাইয়া নাজনীন
রাবি ইনফরমেশন এন্ড কমিনিউকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাজনীন বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারণা একটি ক্যাম্পাসে। হল ও মেস গুলোতে প্রতিনিয়ত জটলাবেঁধে অবস্থান করতে হয়। ক্লাসগুলোতে নেই নিরাপদ দূরত্বের ব্যবস্থা। খাবার হোটেল, ফুটপাতের মতো ঝুঁকিপুর্ণ দোকানপাটে চলবে আড্ডা। তার উপর নেই কোন কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থা।সব মিলে সামাজিক দূরত্ব মেনে সুস্থ জীবন যাপন অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। এত ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাস খোলা মনে হয় না যুগ উপযোগী কোন কাজ হবে!
আব্দুল আলিম
রাবি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, করোনাকালে ঘর বন্দী থেকে থেকে যেন আজ নন্দলাল হয়ে যাচ্ছি । হাট-বাজার, দোকানপাট,গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রি ও ব্যবসা বাণিজ্য সব চলমান কিন্তু চালু নেই শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা যেন আজ শুধু স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়েই বিরাজ করছে! সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করি।
মাহাদী হোসাইন
রাবি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদী হোসাইন বলেন, করোনা আক্রান্তের হার দেশে এখন অস্বাভাবিক। তার মধ্যে মানুষ তোয়াক্কা করছে না স্বাস্থ্যবিধির। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট, একপ্রকার গাদাগাদি অবস্থান করতে হয় প্রতিনিয়ত। মেস গুলোর অবস্থাও ঠিক একই রকম। তাই এই মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে আর একটু বিবেচনা করা দরকার।
নবনীতা রায়
রাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নবনীতা রায় বলেন, করোনা এখন শুধু ঢাকা শহরেই আবদ্ধ নয়। গ্রাম পর্যায়েও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু জনগণ সাধারণত একটা মাস্ক পড়তেও অভ্যস্থ হতে পারছেনা! অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি তো দূরে থাক।
তবে হ্যাঁ, শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ মানসিক ভাবে অনেকটা খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। তারপরও সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সার্বিক স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করা সহ আরো অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারে। তাছাড়া নয়।
আব্দুল লতিব সম্রাট
রাবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল লতিব সম্রাট বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ব্যহত হচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও চরম অবনতি পরিলিক্ষত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ক্যাম্পাস খোলার কোন বিকল্প দেখছি না । তবে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রশাসন কতৃক কঠোর পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, করোনার এই দুর্যোগে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাস খোলা কতটা নিরাপদ এবং সকলের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাই বা কতটা সম্ভবপর হবে সেই বিষয়গুলো আমাদের সর্বদা ভাবায়। কারণ ‘সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি’। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা ও ভাইভা গুলো নেয়া যেতে পারে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুটা দায় মুক্তি হবে বলে আশা করি।
সমস্ত ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সমস্ত ক্যাম্পাস খোলা মনে হয় না খুব ভাল কিছু বয়ে আনবে! কারণ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আর একটু সময় পর্যবেক্ষণ করাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে।তবে শিক্ষামন্ত্রনালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যদি মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে। তাহলে তো আমাদের সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি যথাযথ পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবে।