ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বাঘজুড়ি খাল খনন করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে সেতু পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা ও জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য খাল খননের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খননও শুরু হয় খালের। তবে খাল খননে পানির প্রবাহ শুরু হওয়ায় বাড়ে বিপদ। খালের ভাঙনে বাড়ি, দোকানপাট পড়ে যেতে শুরু করেছে। ভেঙে গেছে সরকারি অর্থে নির্মিত পাকা সেতু। ঝুঁকির মুখে রয়েছে আরও অন্তত তিনটি সেতু। খনন করা খাল এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈশ্বরগঞ্জের কয়েকটি গ্রামের মানুষের।
উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমুরিয়া বিল থেকে জাটিয়া ইউনিয়নের বলদা বিল পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার খাল খনন শুরু হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। 'বাঘজুড়ি' নামে ওই খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে খনন কাজ শুরু হয়। প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটি খননের ফলে এলাকার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের আশা দেখছিল মানুষ। খালটির তলায় ৫ মিটার ও ওপরে প্রায় ১৬ ফুট প্রস্থে খননের কথা ছিল। খাল খনন শেষে দুই পাড়ে বনায়নও করার কথা ছিল। তবে খাল খনন করতে গিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ভেঙে পড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে খালটির প্রায় ৮০ শতাংশ খনন কাজ শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। বনায়নও করা হয়নি। তবে খালটি খননের ফলে এলাকার মানুষের মাঝে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পাকা সেতু ভেঙে পড়েছে খালে। বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে। এ অবস্থায় চরম কষ্টে কয়েকটি খালপাড়ের মানুষ।
জাটিয়া বাজার থেকে চৌরাস্তা যাওয়ার পথে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্মিত সড়কের ওপর একটি সেতু দুই মাস ধরে ভেঙে পড়েছে খনন করা বাঘজুড়ি খালে। সেতুর নিচের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি ভেঙে পড়ে। এতে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী কয়েক গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে দুর্ভোগ দেখা যায়। গ্রামের তাহের উদ্দিন বলেন, 'খাল খনন কইরা আমরার বিপদ ডাইক্কা আনা অইছে। ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা পড়তাছে। পোলও (সেতু) ভাইঙ্গা পড়ছে।' জালাল উদ্দিন নামে এক কৃষক বলেন, সেতুটি দিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ চলাচল করত। তবে খনন করা খালে সেতুটি ভেঙে পড়ায় যানবাহন চলাচল করতে হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
আঠারবাড়ি-উচাখিলা সড়কের পূর্ব জাটিয়া বাঘের বাজারে অন্তত পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৃহদাংশ খালে বিলিন হয়েছে। ব্যবসায়ী আবুল কালাম, শাহেদ মিয়া, নজরুল ইসলাম, জলিল মিয়া ও আপ্তাব উদ্দিনের দোকানের পেছনের অংশ খালে ভেঙে পড়েছে। সেখানে খালের ওপর সেতুটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জাটিয়া গ্রামের ফজলুল হক বলেন, খাল খননে ডাকা হয়েছে সর্বনাশ। সুফলের বদলে তাদের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। বাজারের দোকানপাট, গুরুত্বপূর্ণ পাকা সেতু খালে ভেঙে পড়ছে। কেউ এগুলো রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হলুদ বলেন, খালটি খননের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এর ফলে মানুষ সুফল ভোগ করবে। তবে পরিকল্পনা-ত্রুটির কারণে ক্ষতি বেড়েছে। জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝণ্টু বলেন, খাল খননের ফলে সেতু ভেঙে পড়েছে। বিষয়টি এলজিইডিকে জানানো হয়েছে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদ আহমেদ বলেন, খাল খননের সময় পরিকল্পনার ত্রুটির কারণে সেতু ভেঙে পড়েছে। সেতুর চেয়ে গভীরভাবে খাল খনন করায় ওই অবস্থা হয়েছে। খাল খননের ফলে সেতুটি ভেঙে পড়ায় খনন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহের উপসহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, খালটি যে ডিজাইনে খনন করার কথা, সেভাবে করা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় বাঁধার মুখে তারা শতভাগ কাজ করতে পারেননি। মাত্র ৮৩ ভাগ কাজ করতে পেরেছেন। এতে প্রকল্পের অর্থও ফেরত যাবে। তিনি আরও বলেন, খালটি খননের ফলে মানুষ নানা সুবিধা ভোগ করবে। তবে খালের বিভিন্ন অংশে চারটি সেতু রয়েছে এবং সেগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি তারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছেন। দু'সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হতে পারে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, খাল খননের ফলে সৃষ্ট সমস্যার ব্যাপারে তিনি অবগত নন। সংসদ সদস্যের অগ্রাধিকার বরাদ্দ থেকে সেখানে কী ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়টি দেখা হবে।