ময়মনসিংহের ভালুকায় যৌতুকের টাকার জন্য স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজন অমানবিক নির্যাতন করে অসহায় স্ত্রীকে। নির্যাতিতা নারী জানায় তারা আমারে পাও দিয়ে পারাইছে, কিল-ঘুসি দিছে। লাডি দিয়া বাইরাইছে। কাঁটা কম্পাস দিয়া আমার জিব্বায় চাপ দিছে ঘাই মারছে। এতে আমার মুখ থাইক্যা অনেক রক্ত পরছে। তাদের মাইরে আমি এখনো বিছানা থেকে উঠতে বসতে পারছি না। ভাল কইরা কথাও কইতে পারি না। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে অতি কষ্টে কথাগুলো বলছিলেন, উপজেলার পুরুড়া গ্রামের আব্দুর জব্বারের মেয়ে মোছা:জান্নাত আক্তার। জান্নাত ভালুকা সরকারী কলেজের ডিগ্রি ক্লাসের শিক্ষার্থী।
ওই সময় অসুস্থ নির্যাতিত জান্নাত ও তার পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মন দেয়া-নেয়া করে প্রায় দেড় বছর আগে একই উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের রান্দিয়া গ্রামের মেহের আলীর ছেলে সাঈদ আহম্মেদের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরই তারা পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার জয়নাবাজার এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন এবং ওই এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
এদিকে, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ফেইসবুকে বিভিন্ন মেয়ের সাথে চ্যাট ও মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো। একপর্যায়ে কারখানায় চাকরি করতে কষ্ট লাগে তাই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করার কথা জানালে জান্নাত তার বাবার নিকট থেকে দুই লক্ষ টাকা নিয়ে স্বামী সাঈদ আহম্মেদকে দেন। পাশাপাশি, বিয়ের সময় জান্নাতকে তার বাবার দেওয়া দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকারও তার স্বামী নিয়ে নেয়। তাছাড়া, চাকরি করার সময় জান্নাতের বেতনের টাকাও তার স্বামী নিয়ে নিতেন।
পরবর্তীতে, তার স্বামী তার কাছে আরো তিন লক্ষ টাকা দাবি করতে থাকেন। কিন্তু ওই টাকা দিতে অস্বীকার করার ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামী প্রায় দুই মাস আগে জান্নাতের পায়ে ভাতের ফুটন্ত পানি ঢেলে দেন। ওই ঘটনার পর জান্নাত তার বাবার বাড়ি অবস্থান করতে থাকেন।
এদিকে, মোবাইল ফোনে দেয়া স্বামীর আশ্বাসে গত মঙ্গলবার বাবার বাড়ির লোকজনকে না জানিয়ে স্বামীর বাড়িতে চলে যান জান্নাত। পরে ওই দিন দুপুরে তার স্বামী তার কাছে আবারো তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। তবে ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে জান্নাতকে দফায় দফায় মারধর করে তাকে গুরুতরভাবে আহত করে। ওই সময় তারা তার পায়ের রগ কেটে দেওয়ারও চেষ্টা করে। মারধরের সময় জান্নাতকে ব্লেড দিয়ে কেটে আগুনে পুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে তার লাশ পাশের বিলে ফেলে দেওয়ার কথাও বলা হয়। সেই সময় হাতে পায়ে ধরে তাদের কবল থেকে রক্ষা পান জান্নাত।
পরে শশুর বাড়ির লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একটি অটোতে করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে অটোচালক জান্নাতকে তার পিত্রালয়ে কাছে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। পরে পরিবারের লোকজন তাকে গুরুতর আহতবস্থায় ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। ওই ঘটনায় জান্নাত আক্তার বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে, জান্নাতের স্বামী সাঈদ আহম্মেদ শ্বশুর মেহের আলী, ননাস লাইলী বেগম, ননাসের স্বামী হানিফ মিয়া, দেবর আতা ও রাকিবকে আসামি করা হয়েছে।
থানা পুলিশ এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পাড়েনি।