‘অশীতিপর বৃদ্ধ আলফাজ সরদারের জীবন-সংগ্রাম...’ শিরোণামে দৈনিক কালেরকন্ঠ ও আজকের বার্তাসহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত মানবিক প্রতিবেদন পড়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ড.অমিতাভ সরকার বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদকে ওই বৃদ্ধের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেন এবং তাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে এসে তার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বৃদ্ধ আলফাজ উদ্দিন সরদারের সঙ্গে দেখা করে বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষে তাৎক্ষনিক আর্থিক সহায়তা করেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন অশীতিপর আলফাজ উদ্দিন সরদারের চিকিৎসা ও ব্যবসায় সহায়তা প্রদান এবং তাকে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া সহ তার পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়া হবে। এদিকে মানবেতর জীবন-যাপন করা অশীতিপর বৃদ্ধ আলফাজ উদ্দিন সরদারের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকারের মহানুভবতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বানারীপাড়া প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহল।
প্রসঙ্গত জীবন সায়হেৃ দাঁড়ানো আলফাজ উদ্দিন সরদারকে একজন "ঝালাইকার" হিসেবেই সবাই চেনে। তার বয়স প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই। বানারীপাড়া পৌর শহরে থানা ও প্রধান ডাকঘরের সামনের ফুটপাতে ৩৮ বছর ধরে লোহার/প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালির ভাঙাচোরা জিনিসপত্র ঝালাইয়ের কাজ করছেন তিনি। আগে লোহা-লক্কর ও রাবারের জুতা-স্যান্ডেলের কাজও করতেন। এখন আর লোহা-লক্কর ও জুতো-স্যান্ডেল কেউ নিয়ে আসে না। এখন শুধু প্লাস্টিকের ব্যবহার্য জিনিসপত্রই ঝালাই করেন। তাও আবার সংখ্যায় খুবই নগন্য।
কারণ প্লাস্টিকের কোনো কিছু ভেঙে গেলে মেরামত করে আর কেউ ব্যবহার করতে চান না। এ কাজ এখন বিলুপ্তির পথে। লোহার/প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালির ভাঙাচোরা জিনিসপত্র ঝালাইয়ের কাজ সুনিপুনভাবে করে জোড়া লাগাতে পারলেও নিজের পোড়া কপাল জোড়া লাগাতে পারেননি তিনি। তাইতো জীবনের শুরু থেকে শেষ বেলায় এসেও দুমুঠো ভাতের জন্য জীবিকার প্রয়োজনে তাকে ফুটপাতে ঝালাইকার হিসেবে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আলফাজ উদ্দিন সরদার জানান, এখন আর আগের মতো আয় হয় না। প্রতিদিন ৫০টাকা থেকে ১০০টাকা আবার কখনো কখনো ২০০টাকাও আয় হয়। আগে যখন লোহা-লক্কর ঝালাইয়ের কাজ করতেন তখন ৬০০ থেকে ৭০০টাকা আয় হতো। সামান্য এ আয়েই স্ত্রী পরিজন নিয়ে তার অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন চলে। সংসারে তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ছেলে-মেয়েরাও যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ৫ সন্তানের জনক হয়েও এ বয়সে তাকে কাজ করতে হচ্ছে।
আলফাজ উদ্দিন সরদারের বাড়ি বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামে। স্ত্রী, ২ ছেলে, ৩ মেয়ে রয়েছে তার। তিনি আর্থিকভাবে নিতান্তই অস্বচ্ছল। বয়সের ভারে একদম ন্যূজ। চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। শারীরিক অবস্থাও ভালো না। কিডনির সমস্যা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি। অনেকটা কংকালসারে পরিণত হয়েছে তার শরীর। নিয়মিত ঔষধ খেতে হয় তাকে। ঔষধ কেনার টাকা নেই তার। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।