ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরের শ্রীবরদীতে নির্যাতিতা শিশু গৃহকর্মী সাদিয়া অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ২৭দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লাশ হয়ে বাড়ী ফিরলেন। শনিবার সন্ধ্যায় সাদিয়ার গ্রামের বাড়ি মুন্সীপাড়া এলাকায় এ্যাম্বুল্যান্সে তার লাশ আসে। এরপর থকেই শুরু হয় শোকের মাতম। এ নিয়ে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। আ’লীগ নেতা আহসান হাবিব শাকিল প্রভাবশালী হওয়ায় তার সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এ দিকে লাশ বাড়িতে পৌছায় সাদিয়ার আত্নীয় স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। সেই সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবী জানানো হয়।
সাদিয়ার খালা কাজল, আমার ভাগনিকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। খুনি রুমানা জামান ঝুমুরের ফাঁসি দাবী করছি। এলাকাবাসী শিক্ষার্থী বাবু মিয়া বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে এই ধরনের অপকর্ম আর কেউ না করে। সাদিয়ার পিতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়েকে যে নির্মমভাবে শারিরীক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার আমি ফাঁসি দাবী করছি।
শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খোকার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব শাকিল, স্ত্রী সন্তান নিয়ে শহরের বিথি টাওয়ারের ৬ তলায় ভাড়া বাসায় থাকেন। প্রায় এক বছর যাবত তার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে পৌরশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার হতদরিদ্র সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া পারভিন। কাজে যোগদানের পর থেকে ওই গৃহকর্মীকে বিভিন্ন অজুহাতে শারীরিক নির্যাতন করতো শাকিলের স্ত্রী রুমানা জামান ঝুমুর। বিষয়টি জেনেও ঝুমুরের স্বামী শাকিলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন বেড়েই যায় তার নির্যাতনের মাত্রা। তার শারীরিক নির্যাতনে ওই শিশুর অবস্থার অবনতি হলে মাঝে মধ্যে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেছেন। তবে গত ২৫ সেপ্টম্বর তার অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় একজনের ৯৯৯ নম্বরে ফোন করায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। একই সাথে আটক করে ঘাতক ঝুমুরকে। ২৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ অক্টোবর সন্ধার সময় সাদিয়ার মৃত্যু হয়। তার লাশ ময়না তদন্ত শেষে ২৪ অক্টোবর সন্ধায় শ্রীবরদীতে আনা হয়।
ওই ঘটনায় নির্যাতিত শিশু সাদিয়া পারভীনের পিতা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শুধুমাত্র রুমানা জামান ঝুমুরকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় রুমানা জামান ঝুমুর কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আসামী করা হয়নি গৃহকর্তা আহসান হাবিব শাকিলকে।
শুধু তাই নয় ২৪ অক্টোবর রাতে জানাজা শেষে যে শাকিলের বাসায় নির্যাতিত হয়ে মারাযায় সাদিয়া সেই শাকিলের বাবা আশরাফ হোসেন খোকার পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করা হয় সাদিয়ার লাশ। এ নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তবে কি কৌশলে সাদিয়ার বাবা-মাকে ম্যানেজ করে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে গৃহকর্তা শাকিল।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহুল আমীন তালুকদার জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন কেউ জড়িত থাকলে রেহাই পাবে না। আইননুযায়ী তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।