ময়মনসিংহ বিভাগের আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় সব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে লাইনে দাঁড়িয়েও পাচ্ছেন না তাদরে চাহিদানুযায়ী সামান্য টিকিট। রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারী ও বুকিং সহকারীদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে আছে বাইরের একটি সিন্ডিকেট চক্র।
জানায়, নির্ধারিত ১০ দিন আগে সকাল ৮টায় আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের কম্পিউটার চালু করার ৩০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব টিকিট। অভিযোগ রয়েছে- জিআরপি, নিরাপত্তা ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতিতে এই সময়ের মধ্যেই বুকিং সহকারীরা সব টিকিট তুলে দেন কালোবাজারিদের হাতে। তারাই টিকিট বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন এমন নির্ধারিত যাত্রীর কাছে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই টিকিট।
আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জানা গেছে, ১৪০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে বুকিং সহকারী টিকিটপ্রতি পাচ্ছেন মাত্র ২০ টাকা। বাকি টাকা পাচ্ছে কালোবাজারি সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩২০ টাকার টিকিট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
কালোবাজারে টিকিট বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে স্টেশন সুপার জহুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় কাউন্টার থেকে। বাকি ৫০ শতাংশ অনলাইনে। এখানে কিছুটা অসঙ্গতি রয়েছে। এর পরও চেষ্টা করা হচ্ছে কালোবাজারিদের হাত থেকে বাঁচার। বুকিং সহকারীদেরও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রেলওয়ের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও তারাকান্দিসহ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে আন্তঃনগর ছয়টি ট্রেন। আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ ট্রেনে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার জন্য শোভন চেয়ার ও শোভনসহ বরাদ্দ আসন মাত্র ৪২টি; যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার জন্য ময়মনসিংহ থেকে বরাদ্দ আসন ১০৭টি, জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ১৭১টি; ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে আসন ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ ৭৭টি; জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ২০১টি; নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে ময়মনসিংহের জন্য আসন বরাদ্দ ৫৩টি; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেসে ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন ১৫৩টি; জামালপুরের জন্য বরাদ্দ ১৯২টি; জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য আসন ৯৯টি; জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ২১২টি। এই হিসাবে আন্তঃনগর ছয়টি ট্রেনে ময়মনসিংহের জন্য মোট আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৩১টি। অথচ জামালপুরের চারটি ট্রেনের জন্যই আসন বরাদ্দ ৭৭৬টি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আন্তঃনগর ট্রেনের আসন ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দের এই চিত্র বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের জন্য অমর্যাদাকর। যেসব টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। যার ফলে ময়মনসিংহ বিভাগের যাত্রীদের জন্য টিকিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মত অবস্থায় পরিনত হয়েছে। সংস্নিষ্ট প্রশাসনের নিরবতায় টিকিট কালোবাজারীরা এই সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিঞ্জ মহল জানায়।