কুড়িগ্রামের উলিপুরে নারী পিপাসু ভন্ড কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে মানুষকে ধোকা দিয়ে চিকিৎসার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও কবিরাজী ফন্দিফিকির করে একাধিক বিবাহ এবং স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত- পেনকু মামুদ এর পুত্র ছোবাদ আলী ওরফে টস্যু কবিরাজ দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় বিভিন্ন কবিরাজী করে আসছেন। এতে মেয়েদেরকে আসক্তি করে ইতিমধ্যে ৪টি বিবাহ করেছে। স্থানীয় কতিপয় লোক জানান, মোটর সাইকেল যোগে বিভিন্ন এলাকায় কবিরাজী করে থাকেন। তার মধ্যে জ্বীন, ভুত তারানো, ভাংগা সংসার জোড়া লাগা, বিবাহ বিচ্ছেদ, জন্ডিস, মেয়ে-ছেলেদের উপর আসক্তি ইত্যাদি কবিরাজী করে থাকেন।
এছাড়াও বিভিন্ন গাছান জাতীয় ঔষুধ তৈরি করতে এলাকার বিভিন্ন ছ-মিলে তার দেখা পাওয়া যায়। উক্ত ভন্ড কবিরাজ প্রভাবশালী হওয়ায় আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউপি সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে এলাকায় ঘোষণা দিয়ে আসছেন। উল্লেখ্য যে, একই গ্রামের নওশাদ আলীর কন্যা লাভলী বেগম এর সাথে গত ৯ বছর পূর্বে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মাটিকাটা মোড় এলাকায় মৃত- আয়নাল হকের পুত্র রাজিব হোসেন এর সাথে বিবাহ হয়। তাদের সংসার জীবনে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
ভন্ড কবিরাজ টস্যু মিয়া এলাকার মেয়ে লাভলী বেগম পরিচিত থাকায় গত দু’মাস পূর্বে লাভলী বেগমের স্বামী রাজিব মিয়ার বাড়িতে গিয়ে নানা ফকিরি কৌশল অবলম্বন করিয়া তাকে আকৃষ্ট করে ফেলে। এক পর্যায়ে রাজিব মিয়ার সংসার ছেড়ে দিতে বাধ্য করে টস্যু মিয়া। লাভলী বেগম উপায় খুঁজে না পেয়ে দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে অসহায় হতদরিদ্র পিতা নওশাদ আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ সুযোগ বুঝে ভন্ড কবিরাজ বিভিন্ন ফন্দি ফকির ও বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে অবৈধ ভাবে মেলামেশা করতো। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভন্ড কবিরাজকে অবৈধ সম্পর্কের কথা গ্রামবাসী জানালে তিনি অস্বীকার করেন।
পরে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে পিতা নওশাদ আলী বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন এর নিকট অভিযোগ করলে দেড় মাস পূর্বে স্থানীয় মজিবর গোয়াল এর বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় দেড় হাজার লোকের উপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে একটি শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত বৈঠকে ভন্ড কবিরাজ টস্যু মিয়াকে হাজির করে সত্যতার জন্য বলা হয়। এতেও তিনি অস্বীকার করলে পরে নওশাদ আলীর কন্যা লাভলী বেগম উপস্থিত বৈঠকে হাজির হয়ে মোবাইল ফোনে ভন্ড কবিরাজ ছোবাদ আলী ওরফে টস্যু মিয়ার বিভিন্ন কথার রেকর্ড উপস্থিত বৈঠকে প্রকাশ করেন এবং শোনান।
বৈঠকের লোকজন ভন্ড কবিরাজকে মোবাইল ফোনের রেকর্ডের কথাগুলোর সত্যতার ব্যাপারে বলা হলে পরে টস্যু মিয়া স্বীকার করেন। উপস্থিত বৈঠকে টস্যু মিয়া লাভলী বেগমকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেয়। বৈঠকের লোকজন বিবাহের বিষয়টি অসম্মতি জানান। লাভলী বেগমকে সাংসারিক ভরন পোষনের জন্য জরিমানা বা জমি লিখে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হলে টস্যু মিয়া উপস্থিত বৈঠকে রাজি হয়নি। পরে শালিস বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু স্থানীয় কতিপয় লোকের সহায়তায় বৈঠকের রাতেই লাভলী বেগমের সাথে টস্যু মিয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ প্রতিবেদকের সাথে ১ম স্ত্রী স্বপ্না ও ২য় স্ত্রী দুলালী বেগমের সাথে কথা হলে বিবাহের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু টস্যু মিয়ার রহস্যজনক কারণে ৪র্থ বিবাহের স্ত্রী লাভলী বেগমের রেজিস্ট্রিকৃত বিবাহের নকল গোপন করে দীর্ঘদিন থেকে ঘর সংসার করে আসা অবস্থায় লাভলী বেগমের উপর পারিবারিক ভাবে যৌতুকের জন্য শুরু হয় নানা নির্যাতন। কিন্তু অসহায় দিনমজুর নওশাদ আলী যৌতুক দিতে না পারায় গত ২৫/১০/২০২০ইং তারিখ আনুমানিক দুপুর দেড় টায় পারিবারিক ঝগড়া বিবাদের জের ধরে টস্যু মিয়াসহ তার বাড়িতে থাকা দুই স্ত্রী ও তার সহদর ভ্রাতা সহ লাভলী বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট শুরু করে। তার আত্মচিৎকারে তার পিতা নওশাদ আলী, মা সজিনা বেগম, ছোট ভ্রাতা রশিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে লাভলী বেগমকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে। চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে লোকজন উপস্থিত হলে মারপিট বন্ধ করে। টস্যু মিয়া গংরা ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় লাভলী বেগম ও তার মাতা সজিনা বেগম ঘটনার দিন বিকাল ৫টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে মহিলা সার্জারী বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার গ্রহণ করে। স্থানীয় ভাবে কোন মিমাংসার উপায় খুঁজে না পেয়ে সজিনা বেগম বাদী হয়ে গত ২৮/১০/২০২০ইং তারিখে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল, কুড়িগ্রাম। অভিযোগের ধারা- ২০০০ইং সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী/০৩) আইনের ১১ (গ)/৩০ ধারা মোতাবেক একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-১০০/২০। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি ঘটনাস্থলে তদন্ত করে প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে জমা দেয়ার জন্য উলিপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভন্ড কবিরাজ টস্যু মিয়া মামলা দায়েরের সংবাদ শুনে বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি বা মিমাংসা করার চাপ সৃষ্টি করেন এবং কতিপয় স্বাক্ষীগণকে চাপ সৃষ্টি করে ২৯/১০/২০২০ইং তারিখে কুড়িগ্রাম আইনজীবী সমিতিতে উপস্থিত করে মিথ্যা মামলা বলে একটি এফিডেভিট করিয়ে নেন। এলাকায় টস্যু মিয়া সহ তার দলবল প্রকাশ করেন যে, মামলা করে কোন ফয়দা হবে না। আমি স্বাক্ষীগণের এফিডেভিট করে নিয়েছি।
ঘটনার বিষয়টি নিয়ে বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন এর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে- তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
এব্যাপারে উলিপুর থানার অন্তর্গত নামাজের চর পুলিশ ফাঁড়ির তদন্ত কর্মকর্তা তাজমিরুল হক জানান, কেউ অভিযোগ করেনি অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।