সকালের মিষ্টি রোদে মুড়ির সাথে রসের আয়োজন আর কেনা বেঁচা শুরু হয়ে গেছে এখনই। খেঁজুর গাছের সংকট স্বত্তেও দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার এখনও যেসব গাছ অবশিষ্ঠ আছে তা কেঁটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা।
তথ্য মতে জানা যায় যে, আরও কিছুদিন পর শীতের এ রস উৎসব শুরু হবে পুরোদমে শীতের তীব্রতা শুরু না হলেও পুরোদমে আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠে এইসব খেঁজুরের রস অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা অনেক বেশি।
সভ্যতার ক্রমবিকাশে সময়ের পরিবর্তনে দিন দিন বিরামপুর উপজেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে খেঁজুর গাছের পরিমান। কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে,ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য খেঁজুর গাছ দেখা যেত। বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা ক্ষেত- খামারের আশে-পাশে এমনকি রাস্তা ঘাটের পাশে আর আগের মত খেঁজুর গাছের দেখা মিলেনা। যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। আজ খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ গাছিরা তাদের পুরুষানুক্রমের পেশা ছেড়েছেন। তবে হাতে গোনা ক’জন এখনও ধরে রেখেছেন এই পেশা।
বিরামপুর পৌরসভাধীন চাঁদপুর মধ্যপাড়ার গাছি আমির আলী বলেন, "দিন দিন খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পেশাটি বর্তমানে ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছে তিনিসহ এলাকার অনেক গাছীরা"।
সচেতন মহল মনে করেন গ্রামের মানুষকে বেশি বেশি করে খেঁজুর গাছ রোপন করার বিষয়ে উৎসাহিত ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি কিংবা বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসা উচিৎ। তাছাড়া প্রতি বছর আমরা যে পরিমাণে খেঁজুর গাছ কেটে ফেলছি তাতে আর কয়েক বছর পর এই খেঁজুর গাছের রস পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে বিরামপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, "বাঙ্গালিরা কিছু মৌসুমী খাবারের প্রতি আকৃষ্ট। তার মধ্যে খেঁজুর রস একটি। খেঁজুর গাছের রসের প্রতি আমাদের লোভ এখনো আছে কিন্তু আমরা খেঁজুর গাছের কথা ভুলে গেছি"।
কাউন্সিলর আরো বলেন- তালগাছ ও অন্যান্য বৃক্ষ রোপনের পাশাপাশি খেঁজুর গাছ রোপন করা আমাদের উচিৎ। নতুবা আগামী প্রজন্মের কাছে খেঁজুর গাছ অচেনা গাছে পরিনত হবে"।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিকছন চন্দ্র পাল বলেন- ইতিমধ্যে উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়কের দু-পাশে তালগাছের বীজ রোপণ হয়েছে। তালগাছের মত খেঁজুর গাছ ও লাগাতে হবে আমাদের। তাছাড়াও পরিবেশ বান্ধব গুরুত্বপূর্ণ ও আমাদের ঐতিহ্যের এই খেঁজুর গাছ টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে সাধ্য মতো খেঁজুর গাছ রোপন করতে হবে। সেই ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ প্রদান করেন তিনি"।