বাগেরহাটের শরণখোলায় ধান ক্ষেতে কারেন্ট নামক বিশেষ প্রজাতির পোকার আক্রমনে ব্যাপক ফসলহানির আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রতিদিন একর একর জমি ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারেন্ট পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষার জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ মাইকিং ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছেন বলে কৃষি বিভাগ সুত্র নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে এবার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও ৪হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছে। সম্প্রতিক অতি বর্ষনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও পানি নেমে যাওয়ার পরই প্রায় এলাকায় কারেন্ট নামের এক বিশেষ পোকার প্রকোপ দেখা দেয়। পোকাটি প্রতিটি ধান গাছে আক্রমন করার ২/৩ দিনের মধ্যেই গাছ বিবর্ণ হয়ে পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার প্রায় সর্বত্র এ অবস্থা দেখা দেয়ায় চাষীরা ফসলহানির আশংঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
উপজেলার উত্তর রাজাপুরে চাষী আকব্বর খান (৬০) জানান, তার ৪০ বিঘা জমি এখন পোকার দখলে। দক্ষিণ রাজাপুরের চাষী নজরুল গাজী (৪০) বলেন তার ২০ বিঘা ও উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের বাদল সরদার (৪৫) জানান, তার ৫ বিঘা জমির একই অবস্থা। উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের চাষী মিলন আকন, মানিক আকন, রফিকুল আকন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে চাষের কাজে ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার তারা কোন ফসল ঘরে নিতে পারবে বলে মনে হয়না। গত কয়েকদিনে পোকার আক্রমনে ফসলের মাঠ বিবর্ণ হয়ে গেছে। দেখলে মনে হয় কেউ ফসলের মাঠে আগুন দিয়ে গাছগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। কীটনাশক দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধানের ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ কান্তী রায় বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারনে ধান ক্ষেতে এই পোকাটির আক্রমন হয়ে থাকে। এরা খুব দ্রুত ধান ক্ষেত ধ্বংস করে দেয় বলে পোকাটির নাম দেয়া হয়েছে কারেন্ট পোকা। তবে তিনি এই পোকা দমনে প্লেনাম, একতারা ও পায়রাজিন নামের কীটনাশক ব্যবহারের জন্য চাষীদের পরামর্শ দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন জানান, সময়ের সাথে সাথে পোকা ও রোগের ধরন পাল্টেছে। চাষীদের চাষাবাদে আধুনিক ও পরিকল্পিত চাষের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলাকার চাষীরা ধান রোপনের ক্ষেতে পরিকল্পিত ও নির্ধারিত দুরত্বের নিয়ম রক্ষা করেনা। ফলে রোগ বালাই ও পোকার আক্রমন তারা সহজেই দেখতে পায়না। এ ব্যাপারে চাষীদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পোকা দমনের চেষ্টা চলছে। জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে শরণখোলায় ১২ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য কৃষি বিভাগকে সার্বক্ষনিক মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।