বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের ঘুমান্ত মা-বাবার কোল থেকে তিন মাস বয়েসী শিশু আব্দুল্লাহকে অপহরন করে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামীকে যাবজজ্জীবন কারাদন্ড আদালত। রবিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. নূরে আলম এ রায় ঘোষনা করেন। এসময় দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। রায় ঘোষনার সময় আসামী সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদারের ছেলে মো. হৃদয় চাপরাসি ওরফে রাহাত হাওলাদার (২১), একই গ্রামের জসিম সোবাহান হাওলাদারের ছেলে মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) এবং আব্দুর রশিদ হাওলাদারের ছেলে মো. ফায়জুল ইসলাম (২৮)। এরা সবাই একই বংশের।
চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। এরপর শুরু হয় আসামী, বাদী, পুলিশ, চিকিৎসক, সাধারণ স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক। ৯ মার্চ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলাটির বিচার কাজ শেষ করে আদালত।
মামলার বিবারনে জানাযায়, গত (২০১৯) সালের ১১ মার্চ দিনগত রাত ৩টার দিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের রেশমা বেগম তার আড়াই মাসের শিশু আব্দুল্লাহকে বুকের দুধ খাইয়ে স্বামী দলিল লেখক মো. সোহাগ হাওলাদারের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে শিশু আব্দুল্লাহকে রাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা অপহরন করে নিয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগে তারা দেখতে পান বিছানায় শিশু আব্দুল্লাহ নেই।
জানালার গিরিল ও দরজা খোলা রয়েছে। এসময় পুলিশকে খবর দেন শিশুটির পিতা। ওই দিনই অপহৃত শিশুটির বাবা সোহাগ হাওলাদার বাদী হয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত অপহরনকারীদের নামে মামলা দায়ের করে। পরে শিশুটির মুক্তির জন্য মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। শিশুটির বাবা সোহাগ তাদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করেন।
কিন্তু অপহরণকারীরা শিশুটিকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে না দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করলে তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ওই উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের সূত্রধরে প্রথমে মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদারকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার ৭ দিন পর ১৮ মার্চ প্রধান আসামী মো. হৃদয় চাপরাসির দেখানো মতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশারীঘাটা গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকার একটি মৎস্য খামারের টয়লেটের শেফটি ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এসময় ঘটনা সাথে জড়িত হৃদয়ের দুই সহযোগি মহিউদ্দিন ও ফায়জুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আসামী হৃদয় শিশু আব্দুল্লাহকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আব্দুল মতিন তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ২৫ জন স্বাক্ষী স্বাক্ষ্য দেন।
আসামীরা পরষ্পর যোগসাজসে শিশুটিকে হত্যা করেছে বলে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য ও পুলিশের তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের এই দন্ড দেন বিচারক।
মামলার বাদী শিশুটির বাবা মো. সোহাগ হাওলাদার, মা রেশমা বেগম ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী এপিপি রণজিৎ কুমার মন্ডল রায়ে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে, আসামী পক্ষের কৌশলী মো. এনামুল হেসেন জানান, তার মক্কেল আদালতে ন্যায় বিচার পায়নি। সেকারনে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে জানান তিনি