ময়মনসিংহের ফুলপুরে রাস্তায় ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ বাবার পাশে ফুলপুর উপজেলা প্রশাসন। বৃদ্ধ বাবার নাম শাহাব উদ্দিন (৮০)কে রাস্তায় এনে গাড়ির নিচে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন বিছানা নষ্ট করে ফেলার অভিযোগে অসহায় ওই বৃদ্ধ বাবাকে ছেলে রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাসিমা গাড়ির নিচে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মানবিক ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার ও ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমারত হোসেন গাজী খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ অর্থ নিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওই অসহায় বৃদ্ধ বাবার পাশে গিয়ে দাড়ান।
জানা যায়, সাহাব উদ্দিন (৮০) বার্ধক্যের ভারে জর্জরিত। সারাটা জীবন পরিশ্রম করে ব্যয় করেছেন সন্তানদের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দিতে । যে ছেলেকে বড় করতে সারাজীবন পরিশ্রম করেছেন সেই ছেলেই আজ তাকে বোঝা মনে করে সেই ছেলে রফিফুল ইসলাম ও পুত্রবধূ নাসিমা গাড়ির নিচে ফেলে মেরে ফেলতে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে নিয়ে যান। তখন বৃদ্ধ বাবার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এলে রাস্তার মাঝখানে ওই বৃদ্ধকে রেখে তারা পালিয়ে যান।হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে ভোরে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের ফুলপুর উপজেলার সাহাপুর চেরাগআলী মিলসংলগ্ন স্থানে।
সকালে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে ফুলপুর থানায় একটি কল আসে যে় রাস্তার ধারে একজন বৃদ্ধ হাউমাউ করে শিশুর মত কান্নাকাটি করছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে এবং তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে পুলিশ ওদের খুঁজে বের করলে তারা হৃদয়বিদারক ওই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয় এবং কৃত অপরাধের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এমনকি জীবনে আর কোন দিন এ ধরনের ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাবে না বলে অঙ্গীকার করে।
পরে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে পুলিশ তাদের মাঝে সুষ্ঠু সূরাহা দান করেন। সেইসাথে ভবিষ্যতে বৃদ্ধ পিতার সম্পূর্ণ ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার ছেলে পালন করবে, এটা নিশ্চিত করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে মানবিক ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেষ চন্দ্র সরকার অসহায় বৃদ্ধ শাহাব উদ্দিনের কাছে যান এবং তাকে চাল, ডাল, তেল, আলুসহ ৫বস্তা খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করেন। সেইসাথে ভবিষ্যতে আরও সহযোগীতার আশ্বাস দেন। প্রয়োজনে এই বৃদ্ধকে আলোচনা সাপেক্ষে সরকারী ঘর করে দেয়া হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন ইউএনও। এর আগে ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমারত হোসেন গাজী বৃদ্ধকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও সহযোগীতার আশ্বাস দেন। ভবিষ্যতে সন্তানরা এই ধরনের অমানবিক কাজ করলে সন্তানদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে উপজেলা প্রশাসন ব্যাবস্থা গ্রহনের আস্বাস দেন। বিষয়টি উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।