সারাদেশে চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। জন'সচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সারাদেশের ন্যায় পাবনাতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে করোনার দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর ১০ মাস গত হলেও পাবনায় করোনা চিকিৎসার কোন অগ্রগতি হয়নি। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা গত ১০ মাসে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে গেলেও সেই আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে পাবনা। জেলায় এখনো পর্যন্ত কোন আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন না হওয়ার কারনে এ জেলার করোনা রোগীদের নমুনা পরিক্ষার করার জন্য পাঠাতে হয় অন্য জেলায়। নমুনা পরিক্ষার সুযোগ না থাকায় এ জেলায় পরিক্ষার পরিমাণও অনেক কম। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, শুধু মাত্র সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির নমুনা পরিক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন (পাবনা) ডাঃ কেএম আবু জাফর বলেন, পাবনায় আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। বার বার চেষ্টা করবার পরও এখানে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। পরিক্ষার জন্য ল্যাব সুবিধা না থাকায় এ জেলার রোগীদের নমুনা নিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা সিরাজগঞ্জে পরিক্ষা করানো হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে পাবনায় দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার জন্য অনুমোদন দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো তা স্থাপন করা হয়নি। ল্যাব স্থাপন করা বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, ল্যাবের জন্য বাজেট পাঠানো হলেও তারা কোন উদ্যোগ নেননি।
স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগের অভাব না থাকলেও পাবনার সুধীজন ও রাজনৈতিক মহলের উদ্যোগের অভাবে ল্যাব স্থাপন করার কাজ এখনো ফাইল বন্দী রয়েছে বলে জানান তিনি। আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা না হলেও পাবনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে কিছু নমুনা পরিক্ষা করা হচ্ছে। গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনা আঘাত হানলেও পাবনায় প্রথম রোগী পাওয়া যায় ১৬ই এপ্রিল। জেলায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৬ শত তিরানব্বই জনের নমুনা পরিক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৪৪ জন।
জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন। মাসিক তালিকায় দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও নভেম্বর থেকে আবার বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। এ জেলায় রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পাবনায় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন আসেনি হয়নি কোন উন্নতি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শুরু থেকেই করোনা রোগীদের কোভিট-১৯ ইউনিটে সেবা প্রদান করে আসছে। তবে শত শয্যার এই ইউনিটে এ পর্যন্ত মাত্র ১ শত ৩৮ জন সন্দেহ ভাজন রোগী ভর্তি করা হয়। যার মধ্যে মাত্র ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলো। পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ রোগী ভর্তি হচ্ছেন না বলে জানা যায়। হাসপাতাল সুত্র জানায়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কোভিট-১৯ ইউনিটে ঝুকিপূর্ণ রোগীকে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। শুধু মাত্র সাধারণ এবং ঝুঁকিমুক্ত রোগীরা এখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন। করোনা ইউনিটের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত এবং হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সালেহ মোহাম্মদ বলেন, রোগ নির্নয়ে সুযোগ না থাকায় এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় শুধু মাত্র রোগীদের বর্ননা শুনে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। কেননা যে কোন সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এবং আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় আইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
করোনা চিকিৎসায় ইতোমধ্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কোভিট-১৯ ইউনিটের জন্য হাইফ্লো ক্যানোলা সরবরাহ করা হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় এগুলো কোন কাজে আসছে না এমনকি ক্যানোলা গুলো হাসপাতালের ষ্টোর রুমে পড়ে আছে বলে জানান, ডাঃ সালেহ মোহাম্মদ। সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম আবু জাফর বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি খুব তারাতাড়ি জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা যাবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হাসপাতালের আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে এবং ঝুকিপূর্ণ রোগীরাও চিকিৎসা পাবে।
কোভিট-১৯ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিলেও অনেকেই তোয়াক্কা করছে না বা তা মানছে না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু মানুষকে সাজার আওতায় আনা হলেও জনগণের সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন দিয়ে মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।