বাগেরহাটের মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মঈদাড়া এলাকায় জনগনের চলাচলের একমাত্র গ্রাম্য সড়কটি ওরিয়ন গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। এলাকার জনগনের চলাচলের এই একমাত্র সড়কটি দখলে নেওয়ার পরও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কারও কোন মাথায় ব্যাথা নেই।
গ্রামবাসী প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখছে না বলে তাদের অভিযোগ। শুধু সরকারী সড়কটি দখলে নিয়ে খ্যান্ত হননি ওরিয়ন গ্রুপ। বরং পাহাড়ের মত মাটির স্তুপ আকারে বেঁড়িবাঁধ দিয়ে রাস্তার পাশের প্রায় শত শত বিঘা সরকারী খাস জমি দখলে নিচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একালার একাধিক পক্ষ জানিয়েছেন, মংলা উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের একাধিক ব্যক্তি সাথে গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে ওরিয়ন গ্রুপ তাদের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাটের নাম দিয়ে সরকারী খাস জমি ও জনগনের চলাচলের একমাত্র সড়কটি তাদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোনা, ইছামতি, মঈদাড়া ও পশুর নদীগুলো মংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মঈদাড়া গ্রামকে জনবিচ্ছিন্ন করেছে। ফলে ওই গ্রামের জনসাধারণ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য চকগোনা এলাকা থেকে ইছামতি নদীর পাশ দিয়ে সরকারী রেকর্ডি সড়কটি দিয়ে শতবছর ধরে যাতায়াত করে। সেই সিএস ম্যাপসহ বর্তমান জরিপ পর্যন্ত সকল ম্যাপে ৩০ ফুট চওড়া এই সড়কটি অস্তিত্ব রয়েছে।
আর এই সড়কটির পাশে ইছামতি নদীর জেগে ওঠা চরও রয়েছে কয়েকশত বিঘা। চকগোনা গ্রামের পর গোনা নদী পার হয়ে প্রায় ২ কিলো পাঁয়ে হাটা মাটির রাস্তা দিয়ে মঈদাড়া গ্রামেরর আবাল-বৃদ্ধ, শিশু কিশোর, শিক্ষার্থী তাদের নিত্য দিনের কাজকর্ম শেষ করে। সকলেরই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর একমাত্র সড়ক এটি। কয়েক বছর আগে বহুজাতিক কোম্পানী ওরিয়ন গ্রুপ তাদের সৌর বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য ওই এলাকার কিছু আবাদী জমি ক্রয় করে। আবার কিছু জমি মালিকদের টাকা না দিয়ে গাঁয়ের জোরে দখলে নিয়ে জমির উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে। ওরিয়ন গ্রুপ তাদের ক্রয়ক্রত জমির পাশাপাশি মঈদাড়া গ্রামেরর জনসাধারণের যোগাযোগের একমাত্র ২ কিলো রাস্তা ও পাশের নদীর জেগে ওঠা চরসহ প্রায় শত শত বিঘা খাস জমি তাদের দখলে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মহিলা সদস্যা নিধুকা বাছাড়, সত্যজিৎ মিস্ত্রি, সুষমা মিস্ত্রি, শিমুল মন্ডল, দিলিপ মিস্ত্রি, গোবিন্দ মিস্ত্রি, মো আক্তারুজ্জামানসহ শতাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে সকলেই ওরিয়ন গ্রুপের এই জমি দখলের অভিযোগ করেন। এমনকি বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র রায়ও সরকারী রাস্তা দখলের প্রতিবাদ করেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এদিকে ওরিয়ন গ্রুপের মংলার প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আবুল হায়াত মো. বদিউজ্জামান জানান, গ্রামবাসীকে সন্তুষ্ট রেখে আমরা উন্নয়ন কাজ করছি। ওরিয়ন গ্রুপ আগে ওই স্থানে বেডিঁবাঁধ দিয়ে মাটি ভরাট কাজ করছে। এতে গ্রামীদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। তবে যে ভাবে গ্রামের লোকদের চলাচলে সুবিধা হবে সেই ধরনের রাস্তা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার ও মংলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, জনগনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওরিয়ন গ্রুপের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ওই জমি সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে তিনি যে ভাবে মতামত দিবেন ও জনগনের মতামত কে প্রধান্য দিয়ে সকলের সুবিধা অনুয়ায়ী পরবর্তীতে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করেন।