ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে লুকিয়ে নারীদের গোসলের ছবি ভিডিও-করা ও দেখা তার নেশা! প্রতিনিয়তই এ কাণ্ড করলেও অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় ও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগিরা মুখ খোলেননি। সর্বশেষ গত তিনদিন আগে এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী এক পরিবার। বিচার চাওয়ায় দুই নারীকে পিটিয়ে জখম করে অভিযুক্তের পরিবারের লোকজন।
পরে আজ মঙ্গলবার এক সালিসে অভিযুক্তকে হাজির করে কান ধরে উঠবস এবং নারীর পরিবারদের সদস্যদের পায়ে ধরিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে মগটুলা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩২) দুপুরের পরে খোঁজ নেন কোন বাড়িতে গোসলখানায় গোসল করছে নারীরা। সেখানেই ওৎ পেতে বসে থেকে গোসলের দৃশ্য দেখা ছাড়াও নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারন করেন। পরে এগুলো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এসব ঘটনা প্রচার হলেও ভুক্তভোগীরা লোকলজ্জার ভয়ে চেপে যায়। শফিকুল পার্শ্ববর্তী বাড়ির পাশে একটি গোসলখানার পেছনে বসে উঁকি দেওয়ার সময় বাড়ির দুই যুবক তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। পরে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে ঘটনাটি এলাকার লোকজনকে জানানোর কারণে শফিকুলের বাবা মফিজ উদ্দিন ভুক্তভোগী পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে দুই নারী এগিয়ে আসলে তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করেন মফিজ উদ্দিন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মারধরের শিকার পুরুষ জানান, মারধরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ এসে তদন্ত করে শফিকুলকে না পেয়ে তার বাবা মফিজ উদ্দিনকে আটক করে। এ সময় স্থানীয় সালিসকারীরা মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে মফিজকে পুলিশের কাছ থেকে রেখে দেয়। আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা নিয়ে সালিসের আয়োজন করে। স্থানীয় বৈরাটি মাদরাসায় আয়োজিত সালিসে উপস্থিত ছিলেন মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ এলাকার চিহ্নিত সালিসকারীরা।
সালিসে থাকা লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, সালিসে অভিযুক্ত ছাড়াও দুই নারীরর পরিবারের লোকজনকে উপস্থিত রাখা হয়। এ সময় অভিযুক্ত শফিকুল নিজের অপরাধ স্বীকার করেন এবং আর করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে সালিসের সিদ্ধান্তে তাকে কান ধরে উঠবস ও দুই নারীর পরিবারের সদস্যদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
সালিসে থাকা স্থানীয় মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার পারভেজ বলেন,কি করবাম ভাই লোকজন ধরছে তাই সালিসে গেছি। এটা তো আসলেই বড় অপরাধ। ক্ষমার অযোগ্য।
লিখিত অভিযোগটির তদন্তকরারী ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম জানান, তদন্তে তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। পরে বাদীকে থানায় আসতে বলেছিলেন। না আসায় মামলা হয়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের মিয়া জানান, ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।