ময়মনসিংহের নান্দাইলে মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। সরেজমিন জানা যায় ভুট্টু মিয়া ৬০ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। গত বছর করেছিলেন ১শ, কাঠা জমিতে। এখন ফসল ঘরে তুললেও করোনার প্রভাবে পাইকারের দেখা নেই। এজন্য স্থানীয় আড়তে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তাই লাভ দূরের কথা খরচের টাকাই তুলতে পারেননি। করোনার কারণে পরপর দুই বছর লোকসান হওয়ায় তিনি আর মিষ্টি কুমড়া চাষ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। শুধু ভুট্টু মিয়া নন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বিপাকে পড়েছেন নান্দাইল উপজেলার খলাপাড়া গ্রামের শতাধিক চাষী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খলাপাড়া গ্রামটির অবস্থান নান্দাইল-তাড়াইল সড়কের রাজগাতী ইউনিয়নে। কম খরচে ও অল্প দিনে ভাল ফলন হওয়ায় প্রতি বছর এই গ্রামের প্রায় সব কৃষকেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে থাকেন। মার্চের শেষে থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত কুমড়া বিক্রির উপযোগি হয়।
এ সময় কৃষকরা জমি থেকে কুমড়া তুলে সড়কের পাশে অথবা জমিতে স্তুপা করে রাখেন। দূর দুরান্তের পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে পাইকারের দেখা নেই। তাই উৎপাদিত ফসল অর্ধেক দামে স্থানীয় আড়তে ও খূচড়া পাইকারের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। বুধবার সকালে খলাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে হাজার হাজার মিষ্টি কুমড়া রেখেছেন কৃষক। কিন্তু কোন পাইকারের দেখা নেই।
রাস্তার পাশে কয়েকটি জমিতে দেখা গেছে শতশত কুমড়া পচে নষ্ট হচ্ছে। কোথাও গবাদি পশু খাদ্য হতে দেখা গেছে। চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, এবার সুদে টাকা এনে লাউ চাষ করেছি বেশি লাভের আশায়। লাভ তো দুরের কথা, কয়েক লাখ টাকা ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে আছি। রুহুল আমিন বলেন, গত বছর ৪০ কাঠা জমি বন্ধক নিয়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছিলাম। তখন করোনার কারনে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ বছর নিজের ৮ কাটা জমিতেই চাষ করেছি। এবারও লোকসান হবে। ভূট্টু মিয়া জানান, ৬০ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু অর্ধেক টাকাও বিক্রি করতে পারেননি। তাই আগামী বছর আর এই ফসল করবেন না।
আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার কারণে বাহিরের পাইকার না আসায় স্থানীয়দের কাছে ৪ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বাবুল বলেন, এ গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষীদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখা যায়। অনিশ্চিত ভবিৎষতের শঙ্কায় প্রতিটি পরিবার। করোনা দুর্যোগ গ্রামের মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। গ্রামের হতাশাগ্রস্থ শতাধিক চাষী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে। নইলে পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
পাশের উপজেলা ঈশ^রগঞ্জের পাইকার আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি এ বছর খলাপাড়া গ্রাম থেকে ৭০ টন মিষ্টি কুমড়া কিনেছেন। লকডাউনের কারণে পরিবহণ খরচ বেশি। তাছাড়া চাহিদাও কম। তাই কৃষক কম মূল্য পাচ্ছে। রাজগাতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রোকন উদ্দিন বলেন, খলাপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ কৃষকের প্রধান ফসল মিষ্টি কুমড়া।
গত দুই বছর করোনার কারণে কৃষক সঠিক মূল্য পায়নি। তাই চাষিদের প্রণোদনার আওতায় আনা উচিত। নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, আমি নতুন আসার কারণে আজই জানতে পেরেছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কি করা যায় তা তিনি দেখার আশ্বাস দেন। এই বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চাচ্ছেন সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগিতা।