রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনি ইউনিয়নের বউরাকোট গ্রামের মোতালেব মিয়ার মেয়ে মোসলেমা খাতুন। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও মোসলেমাকে আর পায়নি। পরে মিঠপুকুর থানা পুলিশকে অবগত করে তার পরিবার।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে মোসলেমার বাড়ির পাশের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে হঠাৎ পঁচা গন্ধ বের হতে থাকে। ওই গন্ধের সূত্র ধরে খেতের মধ্যখানে গিয়ে স্থানীয়রা মোসলেমার অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়। পরে খবর দিলে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মোসলেমার বাবা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে পুলিশসহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
লাশ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার পরেই মোসলেমার প্রেমিক নাহিদ হাসানকে (২২) আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে রোববার নাহিদকে আদালতে উঠানো হলে তিনি জানায়, মোসলেমা সম্পর্কে তার চাচাতো বোন। তাদের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর চাকরির উদ্দেশ্যে নাহিদ দিনাজপুর চলে যায়। ১৫ দিন আগে মোসলেমা নাহিদকে জানায় সে গর্ভবতী। কিন্তু নাহিদ তা অস্বীকার করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।
ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাহিদকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে মোসলেমা। কিন্তু নাহিদ আসতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে মোসলেমা জিদ করলে সে দেখা করতে রাজি হয়। পরে বাড়ির পাশের একটি ভুট্টাক্ষেতে গিয়ে তারা দেখা করে। এ সময় মোসলেমা তার গর্ভের বাচ্চা রাখতে চেয়ে বিয়ের দাবি করেন। কিন্তু নাহিদ এতে রাজি হয়নি। তিনি যেকোনোভাবে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে। মোসলেমা এতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নাহিদ রেগে গিয়ে ভুট্টাক্ষেতেই তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন। এরপর সে বাসায় চলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নাহিদ হাসান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। পরে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নাহিদ মিঠাপুকুর উপজেলার দলসিংহপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, 'পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যে মোসলেমা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যার সঙ্গে জড়িত নাহিদ হাসানকে। নাহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।'