বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ গোটা পাথরঘাটায় বিশুদ্ধ পানি, রান্নার পানি, গোসল দেওয়ার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া গরু, মহিষসহ পশু প্রাণীর পানিরও তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে দুষিত পানি পান করায় আশঙ্কা হারে বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগসহ ডায়রিয়া।
পাথরঘাটা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে গত ২৪ ঘণ্টায়,,, জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
তবে উপজেলার সকল ইউনিয়নের মধ্যে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রুহীতা, টেংরা ও পদ্মা গ্রামে বিশুদ্ধ পানির বেশি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন রুহীতা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে পশ্চিম রুহীতা ডাক্তারবাড়ী নামক একটি সরকারি পুকুরে হাটুসমান পানি থাকলেও সেই একটি পুকুরের ওপর ভরসা টেংরা,রুহীতা ও পদ্মাসহ কয়েকটি ওয়ার্ডের অন্তত ৮/১০হাজার মানুষ।
জানা গেছে, ওই একটি পুকুরের পাড়ে মাত্র একটি পানির ফিল্টার রয়েছে ওই একটি ফিল্টার থেকে উল্লেখিত ৮/১০ হাজার লোকের পানি সংগ্রহ করতে হয়। এতে রাত/ দিন ২৪ ঘণ্টাই ওই ফিল্টার থেকে পানি সংগ্রহ করার জন্য লম্বা সিরিয়াল থাকে।
এদিকে খাবার পানি ছাড়াও গরু,মহিষসহ পশু প্রাণীর খাবার পানিও সংগ্রহ করতে হয় ওই পুকুর থেকে। পুকুরে পানি কম থাকার কারণে চুরি করে মিটাতে হয় ওই পানির চাহিদা।
রুহীতা গ্রামের কলেজ ছাত্র মোঃ রাসেল, মোঃ কালাম, মোঃ হামেদ শিকদার, অলি হোসেন, মোঃ ইমাম, মোসাঃ লামিয়া, মোঃ মন্টু মিয়া, শহিদ আকনসহ পানি সংগ্রহ করতে আসা ব্যক্তিরা বলেন, এলাকার পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ার করেন এই একটি পুকুর থেকে ৩/৪ কিঃ মিঃ দূর থেকে এসে ঘন্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে এক কলস পানি সংগ্রহ করি।
এছাড়া গোসল দেওয়াসহ পশু প্রাণীদের প্রয়োজনীয় পানি পুকুর থেকে গোপনে সংগ্রহ করতে হয়।
একই অবস্থা পাথরঘাটা উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও।
চরদুয়ানী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড ছোট টেংরা গ্রামের হাফেজ আব্দুছ ছত্তার বলেন, তাদের এলাকার সকল পুকুর শুকিয়ে গেছে, এক মাত্র ভূপাল কির্ত্তনিয়ার বাড়ির একটি পুকুরে হাটুসমান পানি আছে, এলাকার ৫সহস্ত্রাধিক মানুষ ওই একটি পুকুরের ওপর ভরসা। তিনি বলেন, ওই একটি পুকুরের পানি পান করাসহ সকল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাথরঘাটা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দোলা মল্লিক বলেন, পাথরঘাটার প্রতিটি ইউনিয়নে ২৬ টি করে বিশুদ্ধ পানির উৎস স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। তবে এ উপজেলা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য আরও ট্যাঙ্কি ও পানির ফিল্টার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে পানির লবণের মাত্রা ৬শ পিপিএম পর্যন্ত খাবার উপযোগী ধরা হয়। কিন্তু এখানে ভূগর্ভস্থ পানির লবণের মাত্রা ৩ হাজান পিপিএম। সিডর, আইলা, আম্ম্ফানসহ ঘূর্ণিঝড় দুর্গত পাথরঘাটা উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। অথচ পানির মধ্যে বসবাসে এমন দুর্ভিক্ষ উপকূল জুড়ে। এ যেন প্রকৃতির এক নিষ্ঠুর রসিকতা। বিষয়টি নিয়ে বারবার লেখালেখি করছি।
উল্লেখ্য উপজেলা বাসীর জোর দাবীর মুখে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবিরের চেষ্টায় ২৮ এপ্রিল ভ্রাম্যমাণ গাড়ি দিয়ে পাথরঘাটার সদর ইউনিয়নের রুহীতা গ্রামে সাড়ে তিন হাজার লিটার পানি সরবারহ করলেও এলাকা বাসীর প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
এব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির ও পাথরঘাটা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দোলা মল্লিক বলেন যেহেতু পাথরঘাটায় গভীর টিউবল বসেনা এবং নদীর পানি অত্যন্ত লবণ সেহেতু এখানে ব্যাপক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্ক ও পানির ফিল্টার প্রয়োজন।