পর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বনরক্ষীরা এ বছর গোলপাতার মৌসুমে বাওয়ালীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় চার কোটি টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পারমিটধারী `নৌকা থেকে দুই কিস্তিতে এ ঘুষ আদায় করা হয় বলে বাওয়ালীদের অভিযোগ।
যার কারণে বাওয়ালীরা বন উজার করে ঠেকপাতা ও জালানি কেটে পারমিটের অতিরিক্ত গোলপাতা বোঝাই করে নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী এ বছর লোকসানে পড়ে তাদের ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বনরক্ষীদের হয়রানির ভয়ে মৌসুম শেষে শনিবার (১লা মে) বাওয়ালীরা সাংবাদিকদের কাছে এসব অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।
শরণখোলা উপজেলার গোলপাতা ব্যবসায়ী মোঃ তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার, ফুল মিয়া আড়ৎদার, সেলিম বেপারী, মতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও তারা চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে ২৮ জানুয়ারী ও ২৮ ফেব্রুয়ারী দুই কিস্তিতে দুই মাসের গোলপাতার পারমিট করেন। চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল হক ২নম্বর কুপ কর্মকর্তা হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এই সুযোগে তিনি স্টেশন থেকে পারমিট দেয়ার সময় প্রতিটি নৌকা থেকে ২৮ হাজার, কুপে চেক করার নামে ২৬ হাজার, ঘের দেয়ার নামে ১৫ হাজার, বিএলসি বাবদ পাঁচ হাজার, ঘাট চেক পাঁচ হাজার, সিটি কাটানো (পারমিট হস্থান্তর) বাবদ দুই হাজার টাকাসহ বিভিন্ন অজুহাতে আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ৯৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ আদায় করেছেন।
এভাবে দুইশত নৌকা থেকে দুই কিস্তিতে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কুপ কর্মকর্তা। অথচ পারমিট ও বিএলসিতে সরকারি রাজস্ব মাত্র পাঁচ হাজার সাত শত টাকা। ওই ঘুষের টাকা তিনি স্টেশন অফিসের বোটম্যান মিজানুর রহমানকে দিয়ে আদায় করেছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সরকারি রাজস্বের অতিরিক্ত ঘুষ দিতে গিয়ে ব্যাপক লোকসানে পড়ার কারণে অনেকেই আর সুন্দরবনের ব্যবসা করবেন না বলে তারা জানান।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অনেক বাওয়ালী ক্ষতি পোষাতে পাঁচ শত মন নৌকার পারমিট করে অতিরিক্ত তক্তা জুড়ে দিয়ে দুই থেকে তিন হাজার মন গোলপাতা কেটে নিয়ে এসেছে। কেউ কেউ পাতা না পেয়ে গোলঝাড়ের ঠেকপাতা ও জালানি কেটে নিয়েছে। সুন্দরবনের ২নম্বর কুপের যেসব এলাকার বন উজার করে গোলপাতা কাটা হয়েছে তার মধ্যে বেড়ির খাল, নন্দবালা, সিংড়াবুনিয়া, তাম্বলবুনিয়ার আগা, শান্তির খাল, কলামুলা, চানমিয়ার খাল, আলকির খাল অন্যতম।
পারমিটের প্রথম কিস্তিতেই চাদপাঁই রেঞ্জের গোলপাতা সাবার করে দিয়েছেন কুপ কর্মকর্তা ওবায়দুল হক। এরপর দ্বিতীয় কিস্তিতে তিনি গোপনে শরণখোলা রেঞ্জের বড় কৈয়া, ছোট কৈয়া, চেডুয়া, লাঠিমারার ভাড়ানী, হরিণটানার বাউন্ডারী, খালা-বুনজির খাল, পাঙ্গাশিয়া, মরাভোলার টাকার খাল, পয়সার খাল, জহুরমনি, তেতুলবাড়িয়ার সব খালে বন উজার করে গোলপাতা কাটার সুযোগ করে দেন বাওয়ালীদের। এসব এলাকা পরিদর্শন করলে ঠেকপাতাসহ গোলপাতা কাটার দৃশ্য চোখে পড়বে বলে বাওয়ালীরা জানান। অথচ অভয়ারণ্যের কারণে গত চার বছর ধরে শরণখোলায় গোলপাতার পারমিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব কাজে শরণখোলা রেঞ্জের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এনামুল হক বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলি মৌখিকভাবে শুনেছি তবে, কেউ লিখিতভাবে জানায়নি। লিখিত পেলে তদন্ত করে দেখা হবে