শিশু থেকে বৃদ্ধ। কে নেই! লম্বা সিরিয়াল। একটা কাজ শেষ না হতেই আরেকজনের ডাক। মাটিঘেঁষা পিঁড়িতে বসিয়ে সাদা অথবা কালো কাপড় জড়িয়ে কাজ করতেন তারা। বাজারের দিন অথবা গ্রাম্য এলাকার গাছের নিচে পাওয়া যেত তাদের। বলছি নরসুন্দরদের কথা।
বাংলার আবহমান পরিচয়ে মিশে রয়েছেন নরসুন্দরেরা। এক সময় চুল ও দাড়ি কাটাতে সিরিয়ালে অপেক্ষা করতেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিজেদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে কাজ করে নিতেন অপেক্ষমাণরা। এ সময় নরসুন্দরদের কাঁচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত নাপিতপট্টি। শুধু হাটবাজারই নয়, এক সময় গ্রামাঞ্চলের বৃক্ষের ছায়ার তলে নরসুন্দরদের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কেটে নিত শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধরা।
ওই সময়ে সেভ করতে ছিল না ব্লেড। লোহার তৈরি ধারালো খুর দিয়ে দাড়ি কাটা হতো। আর দাড়ি নরম করতে মুখে লাগানো হতো সাবান। হাতের ঘর্ষণে ওই সাবানের ফেনা তুলে করা হতো ক্লিন সেভ। তবে আধুনিক আলোয় হারিয়ে যেতে বসেছেন পিঁড়িতে বসিয়ে চুল-দাড়ি কাটানো নরসুন্দরেরা।
যদিও মাঝে মধ্যে গ্রামের হাটে দেখা যায় নরসুন্দরদের। এমনই এক নরসুন্দর মুনছুর আলী (৬৫)। বাংলার ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে চুল-দাড়ি কাটতে এখনো গ্রাম থেক গ্রামে ছুটছেন তিনি। সোমবার (১০ মে) সকালে গাইবান্ধার জামালপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ রসুলপুর গ্রামে দেখা মিলে তার। এ সময় মাটিঘেঁষা টুলে বসে চুল কেটে নিচ্ছিলেন জলিল মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তি।
তিনি জানান, আগের দিনে হাটবাজার ও গ্রামের গাছতলায় বসে চুল-দাড়ি কামানোর কাজটি করতেন। এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু এখন আর আগের মতো কেউ কাজ করেন না। সবাই বিভিন্ন সেলুনে কিংবা নিজেই বাড়িতে সেভ করে থাকেন।
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে এখনও পেশাটি ধরে রেখেছি। এখনও গ্রামাঞ্চলের কিছু প্রবীণ আমার কাছে কাজ করে নেয়। চুল কাটলে ২০ টাকা ও সেভ করলে ১০ টাকা করে দেন তারা।’
মুনছুর আলীর কাস্টমার খাদেম আলী বলেন, ‘আমার অনেক বয়স হয়েছে। তাই চুল-দাড়ি ঠিক করতে সেলুনে যেতে পারি না। তাই গ্রামে আসা নাপিতের কাছে বাড়িতে বসে কাজ সেরে নিই।’