ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানি বেড়ে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দুই হাজার ১৩৯টি মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ভেসে যাওয়ায় প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। দুই দিন ধরে মৎস্য খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মেরামতের কাজ করছেন। এতে তাদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠাই দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, ইয়াসের প্রভাবে সুগন্ধা ও বিষখালীসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে ২ হাজার ১৩৯টি পুকুর, মাছের ঘের ও জলাশয়। এতে বিভিন্ন প্রজাতির ১৩৫ মেট্রিকটন মাছ ও ৩১ মেট্রিকটন মাছের পোনা ভেসে গিয়ে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলায় ১৮৯২ জন মৎস্য খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৎস্যখাতে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কাঁঠালিয়ায়। এ উপজেলায়ই ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নলছিটির জামুরা গ্রামের সিকদার মৎস্য খামারের মালিক রিপন সিকদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানি বেড়ে আমার দুটি মৎস্য ঘের তলিয়ে অসংখ্য মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে চার-পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুই দিন ধরে শ্রমিক দিয়ে ঘেরের চারপাশে জাল দিয়ে নতুন করে বেষ্টনি তৈরি করেছি। এতেও অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।
নলছিটির তরুণ উদ্যোক্ত শীতলপাড়া গ্রামের মা এগ্রো ফার্মের মালিক আমিরুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমার শিমুলতলা এলাকায় ১ একর জমিতে মাছের ঘের রয়েছে। ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছি। দুই দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে ঘের। এতে অসংখ্য মাছ ভেসে গেছে।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। এ তালিকা আরো বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোন বরাদ্দ আসলে, তা সঠিকভাবে বন্টন করা হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরের প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কাঁঠালিয়া উপজেলার ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে তিন কিলোমিটারই অরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলার দেউরী বেড়িবাঁধ, কৃষ্ণকাঠি এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধ, নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদী তীরের সরই বেড়িবাঁধ ও বিষখালীর নদীর হদুয়া এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় নলছিটি শহরতলীর মল্লিকপুর ও ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকা।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করে ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। জেলার ৮টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয়েছে। এটা মেরামত করতে তিন কোটি টাকার প্রয়োজন। বরাদ্দ আসলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।