পাবনার বেড়া পৌরসভায় ৭ মাস ধরে অর্থ ছাড় না করায় উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মৃধাকে শোকজ করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তাকে ৭ দিনের মধ্যে অর্থ ছাড় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কেন স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ও দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হবে না-সে মর্মে রুল জারি করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বেড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল বাতেনের করা এক রিট পিটিশনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। আদেশের কপি বেড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠানো হয় এবং মঙ্গলবার এটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছার পর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার খাম-খেয়ালিপনা স্পষ্ট হয়।
তবে বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মৌখিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে, এ বিষয়ে কোন নির্দেশই দেননি বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা।প্রায় ৭ মাস ধরে মাস ধরে খাম-খেয়ালিপনা করে বেড়া পৌরসভার অর্থ ছাড় করছেন না উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বেড়া পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল বাতেন এর দায়ের করা এক রিট পিটিশনের (৪৪৯৫/২০২১) ভিত্তিতে হাইকোর্ট উল্লেখিত আদেশ দেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের দ্বৈত বেঞ্চের ওই আদেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহা হিসাব নিরীক্ষক, পাবনার জেলা প্রশাসক, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার, বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ মোট ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আদেশের কপি ২৩ মে বেড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শোকজের কাগজ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বেড়া পৌরসভার মেয়রের উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশের কোনো চিঠি তিনি পাননি। এজন্য এসব অর্থ ছাড় করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত আদেশ ছাড়া এতোদিন পৌরসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সরকারি বরাদ্দের অর্থ আটকে রাখা যায় কি-না, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কখনোই এমন নির্দেশ দেইনি। বরং মঙ্গলবার (২৫ মে) বেড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানান। এরপরই মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে বিষয়টি আমি জানিয়েছি। পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, হিসাবরক্ষণ অফিস আমার অধিনে না। এজন্য আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছিনা।
বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উচ্চ আদলতের স্থগিতাদেশের কপি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে একাধিকবার দেয়া হয়েছে। কিন্ত এরপরও তার খাম-খেয়ালিপনা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ বন্ধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। নাগরিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। বাধ্য হয়ে তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।