হবিগঞ্জের মাধবপুরে ফলন বিপর্যয়ে লিচু চাষীদের হতাশার পর এখন বাজারে লিচু কিনতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন ক্রেতারা। লিচুর রাজ্য মাধবপুর বাজারে লিচু উঠলেও গত বছরের তুলনায় এবার দাম দ্বিগুণ। গত বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় লিচুর ফলন প্রায় ৮০ শতাংশ কম হওয়ায় আকাশচুম্বি দামে লিচুর স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা। তাছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর স্বাদ ও মানও কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
মাধবপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে লিচু উঠেছে তবে অন্যবারের তুলনায় বেশ কম। বাজারের অনেক দোকানই লিচুর অভাবে ফাঁকা পড়ে আছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেদানা জাতের লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতিশ' প্রকারভেদে ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা উপরে এবং মাদ্রাজি জাতের লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতিশ' প্রকারভেদে ২শ' টাকা থেকে ৩শ' টাকার উপরে। গত বছর বেদানা জাতের লিচু বিক্রি হয় প্রকারভেদে ৩শ' টাকা থেকে ৫শ' টাকার মধ্যে এবং মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি হয় ১শ' থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে (প্রতিশ')। পরিপক্ব চায়না-থ্রিসহ অন্যান্য জাতের লিচু এখনও তেমন বাজারে উঠেনি। আর বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন এবার একেবারেই হয়নি। দামের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে মাধবপুর বাজারে লিচু ব্যবসায়ী রইছ মিয়া বলেন, বাগানগুলোতে এবার লিচু নেই। বাগান মালিকরা যে স্বল্প পরিমাণ লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন, প্রতিযোগিতার মুখে তা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণেই বেশি দামে কিনে সামান্য লাভ রেখে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তিনি স্বীকার করেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই লিচু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী নান্নু রায় জানান, এবার বাগানে লিচু নেই। যে পরিমাণ লিচুর ফলন হয়েছে, তা সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে। বাজারে লিচু কিনতে আসা আজগর আলী নামে এক ক্রেতা জানান, মাধবপুরের লিচু থাকায় প্রতি বছর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে লিচু পাঠাতে হয়। কিন্তু বাজারে গত বছরের তুলনায় দাম দ্বিগুণ। ঝুড়ি, প্যাকিং আর কুরিয়ার খরচ দিয়ে প্রতিশ' বেদানা লিচুর দাম পড়বে প্রায় এক হাজার টাকা। তার মানে একটি লিচুর দাম ৫ টাকা। এই দামে এবার দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠানো সম্ভব নয়। এ দামে লিচু কিনে পরিবারের মুখেও দেয়া অসম্ভব। তাই পরখ করে নয়, দেখেই লিচুর স্বাদ মেটাতে হবে। বাজারে মজিদ মিয়া নামে আরেক ক্রেতা জানালেন, যে দামে লিচু বিক্রি হচ্ছে, তা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। এই দামে শুধু উচ্চবিত্ত ও সরকারি কর্মকর্তারাই লিচু কিনছেন। এ অবস্থায় লিচু কিনতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন তিনি। বাজারে লিচু কিনতে আসা মালেক জানান, এবার দাম প্রায় দ্বিগুণ হলেও গত বছরের মতো লিচুর স্বাদ ও মান নেই। তাই বেশি দামে কিনেও লিচুর প্রকৃত স্বাদ পাচ্ছেন না তারা।
মাধবপুর উপজেলার বড়ধলিয়া ও জালুয়াবাদ এবং চৌমুহনী বাগানে মোট ১০০টি লিচুর গাছ রয়েছে। কিন্তু ফল ধরেছে মাত্র ৪৫টি গাছে। অধিকাংশ গাছেই লিচুর ফলন না হওয়ায় হতাশ তিনি। তিনি বলেন, এমনিতে লোকসান। তার ওপর যেটুকু লিচুর ফলন এসেছে, সেটুকুর একটু বেশি দাম না পেলে তিনি চলবেন কীভাবে? প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার লিচুর ফলন নেই বললেই চলে। বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব কষতে হয় এ লিচুকে ঘিরেই। কিন্তু এবার লিচুর ফলন না হওয়ায় আয়-ব্যয়ের অংকটা কষবেন কীভাবে-এ নিয়ে হতাশ তিনি। মাধবপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান জানান, এ উপজেলায় অনেকগুলো বাগান রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে এবার অনেকগুলো গাছে লিচু আসেনি। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবহাওয়াগত কারণে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে।