সিলেটের গোয়ানইঘাটে দুই সন্তানসহ আলিমাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তার পাঁচ বছর বয়সী আরেক ছেলে আফসান। ঘটনার রাতে সে পার্শ্ববর্তী রাধানগর এলাকায় নানাবাড়িতে ছিল। মা ও ভাই-বোন হত্যার খবর এখনো জানে না সে।
আফসানের নানা (আলিমার বাবা) আইয়ুব আলী বলেন, ‘আফসান বর্তমানে আমাদের বাড়িতে আছে। তাকে মা ও ভাই-বোনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। সে ওই বাড়িতে থাকলে হয়তো তাকেও হত্যা করা হতো।’
বুধবার (১৬ জুন) সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুর রহমানের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩৫), আট বছর বয়সী শিশু মিজানুর রহমান এবং তিন বছর বয়সী তানিশা বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকেও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল মামা বাড়িতে থাকায় সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের প্রধান সন্দেহভাজন হিফজুর রহমান।
বুধবার বিকেলে আহত হিফজুরকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। প্রথমে আমরা তা বুঝতে পারিনি। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেয়ার পর বোঝা যায় তার আঘাত গুরুতর নয়। যে বঁটি দিয়ে তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে সেই বঁটিও তাদের নিজ ঘরের।’
হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বঁটি দা দিয়েই খুন করতো না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফজুরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফজুর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন। অথচ হিফজুরের শরীরের আঘাত একেবারেই সামান্য। হিফজুরের দু পায়ে এবং শরীরের কিছু জায়গার চামড়া ছিলে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী সন্তানদের মরদেহের হাত-পাও পরিষ্কার ছিল। অথচ হিফজুরের পায়ে বালি ও কাদা লাগানো ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে তিনি ঘটনার রাতে ঘুমাননি।’
তবে কী কারণে হিফজুর তার স্ত্রী সন্তানদের খুন করতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘হিফজুরের শ্যালিকার বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সালিশও হয়। এই ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া হিফজুর এখনও হাসপাতালে আছেন তাই তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। তবে সুস্থ হলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে আমরা দিনমজুর হিফজুরকে সন্দেহ করছি। তিনি হাসপাতালে পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি।’
হতাহতদের প্রতিবেশীরা জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরি দেখে প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এ সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা।
তারা আরও জানান, দরজার শিটকিনি খোলাই ছিল। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিনজনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুলিশে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে এবং হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠায়।