ময়মনসিংহে এমপি পরিচয়ে প্রতারণা করায় প্রতারক এখন দুই দিনের রিমান্ডে। প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জহির উদ্দিন বাবুল ও তার সহযোগী গুলশান আরা খানমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল হাই তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মোবাইল ফোনে পুলিশ কর্মকর্তাকে পরিচয় দেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতেন নানা কাজ করে দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত ময়মনসিংহে পুলিশের সঙ্গে দাপট দেখাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তিনি। তার নাম জহির উদ্দিন বাবুল (৫৫)। তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের হালিমপুর গ্রামের প্রয়াত ডা. মাহতাব উদ্দিনের ছেলে। বুধবার সকালে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, দাপট আর জোরালো তদবিরের ধরন দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রতারণার চক্র। ঢাকার ফকিরাপুলের 'হোটেল শেল্টারে' তিন বছর ধরে অবস্থান করে দেশজুড়ে প্রতারণা চালাচ্ছিল এ চক্র। তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ময়মনসিংহ নগরীর সেনবাড়ি মসজিদ এলাকা থেকে গুলশান আরা খানম (৪৫) নামের একজনকে আটক করে। তিনি ওই চক্রের সদস্য এবং প্রয়াত পুলিশ উপ-পরিদর্শক হায়দার আলী খানের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, গত ১৫ জুন গুলশান আরা খানম ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি বলেন, নগরীর বাউন্ডারি রোডের আফরোজা আক্তার ডালিয়া ব্যবসার অংশীদারিত্বের টাকার পরিবর্তে চেক দিলে তা ডিজঅনার হয়। সেই টাকা আদায়ে তিনি পুলিশের সহযোগিতা চান। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হলে এমপি পরিচয়ে চাপ দিতে থাকেন বাবুল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে আফরোজা আক্তার ডালিয়া পুলিশকে তার পরিস্থিতি জানান।
ডালিয়া জানান, দুই বছর আগে নগরীর নতুনকুঁড়ি স্কুলে তার সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিচয় হয় গুলশান আরার সঙ্গে। তিনি নিজেকে এইচটি ইমামের ছেলের খালাতো বোন পরিচয় দিতেন। ওই অবস্থায় তিনি নিজের ভাশুরের ছেলে ও মেয়ের চাকরির জন্য কথা বলেন তার সঙ্গে। সেনাবাহিনীর সিভিলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৭ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। ছয় লাখ টাকা নগদ ও পাঁচটি ফাঁকা চেক নেন গুলশান আরা।
পুলিশ হেফাজতে থাকা জহির উদ্দিন বাবুল দাবি করেছেন, মামুন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে গুলশান আরার সঙ্গে তার কথা হয়। ৪৬ লাখ টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার বিপরীতে তাকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ১০ হাজার টাকা বায়নাও করা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, গুলশান আরার কাছ থেকে আটটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলোতে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৩০ হাজার। চক্রের প্রধান জহির উদ্দিনের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারসহ সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রুপে ভাগ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় নারীদের চাকরির প্রলোভনে খালি চেক নিয়ে পরে টাকার অঙ্ক বসিয়ে টাকা দাবি করে।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার বিকেলে থানায় মামলা করেছেন আফরোজা আক্তার। এতে জহির উদ্দিন বাবুল, গুলশান আরা ও মামুনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।