কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, “পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”। কবিতার এই লাইনটির যথার্থতা আবারো প্রমাণ হয়েছে শ্রম বাজারে নারীদের অবদান।
কায়িক পরিশ্রমে পুরুষের মতই মানিয়ে নিচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। বর্তমান সময়ের শ্রমিক সংকটের বড় অংশও পুরণ করছেন তাঁরা। মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন খাতে নারী শ্রমিকদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। নির্মাণ ও হস্তশিল্প ছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে এখন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সরকারী বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকানার নির্মান খাতে নারীদের অংশগ্রহণ শ্রমিক সমস্যা কাটিয়ে তুলছে। মালেকা বানু বলেন, পুরুষের চেয়ে নারীদের শারীরিক সক্ষমতা কম হলেও কাজের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে না। আমার দলের মেয়েরা পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করেন। আমি বিভিন্ন মালিকের কাজের মৌখিক চুক্তি করি।
প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় দল ভাগ করে কাজ সম্পাদন করে হাজিরা নিয়ে বাড়ি যায়। শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কর্মক্ষেত্রে নারীরা প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছেন। নির্মানাধীন কোন বাড়ি-অফিসে মাটি ভরাট, রাস্তার মাটি কাটা, বালু সরানো, রাস্তা নির্মাণ কাজসহ শ্রমিকের প্রায় সব কাজেই নারী শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা রয়েছেন। প্রতিদিন একজন নারী শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকদের সমমান ২৫০ টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন। এ মজুরীর জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। নির্ধারিত এই সময়ের পরেও চুক্তিতে কিছু কাজ করে বাড়তি কিছু আয় হয়। গড়ে প্রতি মাসে একজন নারী শ্রমিক ৯-১০ হাজার টাকা আয় করেন।
নারী শ্রমিক সোহানা বেগম বলেন, আমাদের সাথে যারা কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা। গরিব পরিবারের সদস্য যাদের অন্য কোন আধার নেই তারাই মূলত শ্রমিকের কাজ করেন। এখন কাজের অভাব নেই। সারা বছরই আমাদের কাজ থাকে। নারী শ্রমিক আদর চান বলেন, মাটি কাটার কাজে একজন নারী ও একজন পুরুষের জোড়া করা হয়। নারীরা মাটি কাটতে পারেন না। আমরা মাটি কেটে ঝুড়ি পুরে দিলে তারা মাথায় করে নির্দিষ্ট স্থানে ঢেলে দেয়। আমাদের একটু বেশি পরিশ্রম হলেও টিমের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করি। হাজিরাও সমান নেয়। উপজেলার গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত এখন নারী শ্রমিকদের দেখা যায়।
নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন হয়। ওই দলের সর্দার তাদের কাজ পরিচালনা করে। সর্দারের সাথে কাজের মালিকের কথাবার্তা হয়। সেমতে দলের সদস্যদের বিভিন্ন উপদলে ভাগ করে প্রতিদিনের কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। কাজ শেষে সর্দারের কাছ থেকে মজুরী বুঝে নেয়। এলাকার শ্রমিক শ্রেণীর বেশিরভাগ মানুষ বেকার। ফলে সব কাজেই শ্রমিক সংকট রয়েছে। বিশেষ করে নির্মান কাজে শ্রমিকের বড় সংকট। তবে নারীরা এই কঠিন কাজে সম্পৃক্ত হওয়ায় সাশ্রয়ী হচ্ছেন তারা। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান বলেন, কৃষিকে বিপ্লব হলেও শ্রমিক সংকটে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খাতে আরো নারী শ্রমিক সম্পৃক্ত হচ্ছে। এতে নারী শ্রমিক ও কৃষক উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।