শহর থেকে খালের পাড় ঘেষে যেতে যেতে চোখে মিলবে গ্রামের সেই চিরচারিত অপরুপ সৈন্দর্য্য। এক সময়ের মেঠো পথ এখন পিচঢালা সড়ক। শহর থেকে প্রায় ঘন্টা খানিকের পথ ঐতিহাসিক ভীমরুলী বাজারে। এখানে ব্রীজের উপরে দাড়ালে দেখা যাবে শত শত ছোট ডিঙি নৌকায় বসছে লেবুর হাট। খালের মধ্যে যেন সবুজের সমারোহ। লেবু চাষিরা খুব সকালে বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় নিয়ে আসছে ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে। পার্শ্ববর্তী ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হচ্ছে এই হাটে। দেশের ভিবিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসছে এখান থেকে লেবু কিনতে। এমন দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে আসছে দেশী বিদেশী পর্যটকও। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে পাইকার ও পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই হাট জমে থাকে লেবু চাষি, পাইকার ও দর্শনার্থীদের কোলাহলে। এখানে শুধু লেবুর হাটই বসেনা, বসে পেয়ারার হাটও । আর কদিন বাদেই পেয়ারাও আসবে এই হাটে। সদর উপজেলার ভীমরূলী ও পাশ্ববর্তী স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা এ খাল মূলত পেয়ারার ভাসমান হাটের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত মন পেয়ারা বিক্রি হয় এই হাটে। তবে সে দৃশ্য দেখতে আরো ২০দিন অপেক্ষা করতে হবে। পেয়েরার মৌসুমে পর্যটকের ভীর সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। আগষ্ট মাসের শেষের দিকে একই নৌকায় করে আমড়া চাষিরা ভাসমান হাটে পসরা বসাবেন। পেয়ার, আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সব্জসি ঊৎপদন হয় এসব বাগানে।
এই ভাসমান হাটে লেবু চাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পোন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পোন হয়। ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা এই হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশ জনপ্রিয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবরু চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়েছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায় ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মে:টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে সাচ্ছন্দবোধ করেন।
লেবু চাষিরা জানান, ১ পোন (৮০টি) লেবু তারা ৪শ’ টাকা বিক্রি করেন। তবে লক ডাউনের কারনে জেলার বাইরে তাদের পন্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় এখন দামও একটু কমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো পূর্বের দামে লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন লেবু চাষিরা।
লেবু চাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, তিনি ৪ বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছেন। তার উৎপাদন খরচ ছিলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বছরে তিনি বিক্রি করেছেন ৪ লাখ টাকার লেবু।
তবে ভাসমান হাটে আসা কয়েকজন লেবু চাষি জানালেন সার সংকট, সরকারী ঋন ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ার কথা। এসব চাষিরা জানান, সারের অভাবে অনেক সময় তাদের লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যায়। এ কারনে ফলনও কিছুটা ব্যহত হয়। এ ব্যাপারে তারা কৃষি বিভাগের সহয়তা চেয়েছেন।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: ফজলুল হক বলেন, লেবু মানুষের শরীরে লেবু ভিটামিন সি এর ঘাটতি পুরোন করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে লেবু চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋনের সংকট দুর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।