হবিগঞ্জোর মাধবপুরে প্রায় বিনা পুঁিজতেই একটু শ্রম আর পরিচর্যা করেই কলমি শাক চাষে স্ববলম্বী হয়েছেন পূর্ব মাধবপুর গ্রামের মোঃ ইমান আলী। আর্থিক অভাব অনটনে দশম শ্রেণীতেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় মোঃ ইমান আলী। অভাব আর বেকারত্ব সমাজের মানুষের কাছে তাকে হীন করে তুলেছিলো। সামাজিক লা নায় সে ভাবতো আমি যদি সাবলম্বী হতাম। মনে হতাশা দখল করতে না পারলেও কখনো যে সুখের দিন আসবে তাও ঠিক বুঝতে পারিনি। এর পরেই কলমী চাষেই পেয়ে যায় সফলতা। ফিরে পেয়েছি স্বচ্ছলতা। কলমী শাক গাছের আগা কেটে নিয়ে আটি বেধে বিক্রি করলেও ওই গাছের চারা আর লাগাতে হয় না।
এভাবে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার কলমী শাক বিক্রি করে মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয়। কলমী শাক চাষ করেই যে সফলতা আসে তা এলাকায় এখন অনুকরণীয় দৃষ্টামত্ম সৃষ্টি করেছেন। সফল কলমী চাষী মোঃ ইমান আলী জানান, এবার ২ কানি জমিতে কলমী শাক চাষ করেছেন। এতে প্রথম বার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে প্রতি মাসে খরচ হয় ১৫০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ১১-১৩ হাজার টাকার কলমী শাক বিক্রি করা যায়। তার স্ত্রী আলেয়া বেগম এর অনুপ্রেরণায় ২০১৮ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ১ কানি জমিতে দেশী কলমী জাতের শাক চাষ করেন। এতে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় পরের বছর বেশী করে চারা সংগ্রহ করেন এবং বেশী পরিমাণ জমিতে এ জাতের কলমী শাক চাষের উদ্যেগ গ্রহণ করেন। কলমী চাষী আদাঐর গ্রামের মোহন মিয়া জানান, ২০০০ সালে অর্থ অভাবে দশম শ্রেণীতেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। আর্থিক অভাব অনটনে দশম শ্রেণীতেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিবারের আর্থিক চাহিদা পুরণে একটি মেশিনারিজ গ্যারেজে কাজ নিয়েও সংসার চলতো না। তাই কাজ ছেড়ে নিজ বাড়ীর পাশের ফেলে রাখা ক্ষেতে কৃষি কাজ করে কোনো মতে দিন কাটাতাম। আজ মনে হয় এই দিনটি যদি দশম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় পেতাম তবে আমার লেখাপড়া হয়তোবা বন্ধ হতোনা। আমিও হতে পারতাম উচ্চ শিক্ষিত। বর্তমানে আমি, আমার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমার পরিবার। আমি আমার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এখন তার কলমী শাক পরিচর্যার জন্য মাঝে মাঝে ৩-৪ জন লোক নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করতে হয়। রোগ-বালাই তেমন না থাকলেও জমিতে ইউরিয়া ও কীটনাশক বিষ প্রায় প্রতি সপ্তাহে দিতে হয়। একদিকে কলমী শাক তোলা শেষ হতে না হতেই পেছনের দিকে আবার শাকে ভরপুর হয়ে যায়। এতে মন জুড়ে যায়। তিনি জানান, বর্তমানে ৩ কানি জমিতে প্রতিদিন ১৬-১৮ গাছের অংশ নিয়ে আটি করে কলমী শাক শিক্ষিত থেকে তোলা হয়। প্রথম দিকে প্রতি কুড়ি আটি শাক পাইকারী বিক্রি ১৮-২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দাম উঠানামা করলেও লাভজনক। প্রতিদিন শেষ বিকেলে কলমী শাক কেটে ছোট ছোট আঠি বাধা হয় এবং ভোরে বাই সাইকেলে নিয়ে মাধবপুর শহরের বাজার নিয়ে পাইকারী ক্রেতাদের কাছে এক কুড়ি আঠি ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ টাকার কলমী শাক বিক্রি করে মাসে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়।