কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কল্যাণ মৌজার মো: রফিকুল ইসলামের পুত্র আলম মিয়া (৩০)। তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ০৬ জন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পিতা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী (এক পা নেই), পুত্র সোহেল ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী, অপর দুই সন্তান শিশু এবং স্ত্রী একজন গৃহিনী।
আলম মিয়া কুড়িগ্রামের শাপলা মোড়ের একটি দোকান বিসমিল্লাহ অটো পার্টস থেকে ৮৫ হাজার টাকায় কিস্তিতে একটি মিশুক কেনেন। এখনও উক্ত দোকানে তার ২৮ হাজার টাকার কিস্তি বাকি রয়েছে। এই মিশুকই তাঁর পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। মিশুক চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে পঙ্গু পিতার চিকিৎসার ব্যয়, সন্তানের লেখাপড়া,পারিবারিক ভরণ পোষণ ব্যয় এবং কিস্তির টাকা পরিশোধ করে থাকেন।
স্থানীয় একটি মসজিদে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন কিন্তু সেখান থেকে তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না। এভাবেই চলছিল তাঁর সামান্য আয়ের সংসার। গত ৯ জুলাই/২০২১ রাত আনুমানিক সময় ২ টায় যখন তিনি তাহাাজ্জুদ নামাজ পড়তে ওঠেন তখন দেখেন তাঁর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন মিশুকটি চুরি হয়ে গেছে। তিনি বুক ফাটা কান্নায় চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁর আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশীদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ততক্ষনে তাঁর যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। বেলা দুপুর পর্যন্ত খোজাখুজির পর নিরুপায় হয়ে স্থানীয় কোন মুরব্বীর পরামর্শে বেলগাছা ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ডের আত্মারাম মৌজার ভ্যালংয়ের মোড়ের জনৈক ফুলবাবু নামের এক ফকিরের কাছে যান দরশনীর মাধ্যমে চোর সনাক্ত করে মিশুক উদ্ধারের জন্য। ফকির ঘটনা স্থলে এসে সবকিছু দেখে তুলারাশি সহ রাত আটটায় আবারও আসবে বলে জানায়। সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে চোর ফকিরকে মোবাইল করে জানায় মিশুক তো পাবেই না বরং তোমাকেও আমরা কিডন্যাপ করে শেষ করে দেব। এরপর ফকির ফুলবাবু জীবন ভয়ে মিশুক উদ্ধারে অপারগতা প্রকাশ করে। দিশেহারা আলমা মিয়া অবশেষে ঐদিনই রাত ৯.০০ ঘটিকায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় মোবাইল নম্বর উল্লেখ সহ অভিযোগ দায়ের করেন। কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব খাঁন মো: শাহরিয়ার উক্ত মামলা তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার এস আই জনাব আহসান কে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি ১০ জুলাই/২০২১ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মিশুক উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে সবরকম সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে আসামাত্র আবারও একই নম্বর থেকে ফকির ফুলবাবুকে হুমকি প্রদান করে যাতে তিনি উক্ত নম্বরটি পুলিশকে না দেন। কিন্তু পুলিশ ইতোমধ্যে উক্ত ফকিরের সঙ্গে কথা বলে নম্বরটি সংগ্রহ করে নেন এবং ফকিরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। আলম মিয়ার পরিবার হারিয়ে যাওয়া মিশুক উদ্ধারে পুলিশ সুপার মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এলাকাবাসীবাসী মনে করেন যেহেতু চোরের মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে পুলিশ বিভাগ অবশ্যই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবশ্যই চোর ধরাসহ হারিয়ে যাওয়া মিশুক উদ্ধার করতে পারবে। বর্তমানে অন্যান্য মিশুক চালক ও গরুর মালিকেরা রাত জেগে তাঁদের সম্পদ রক্ষার জন্য পাহারা দিচ্ছে। অনেকে মনে করেন যেহেতু সকল খবরাখবর চোর দ্রুত জানতে পারছে সেহিসেবে এলাকারই কেউ না কেউ চোরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।