হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় সামনে ফুটপাতে ছালা বিছিয়ে জুতা মেরামতের কাজ করে গংগানগর গ্রামের নিত্যানন্দ ঋষির ছেলে রঞ্জন ঋষি। বয়স প্রায় ৭০ বছর। বয়সের ভাড়ে এথন বৃদ্ধপ্রায় রঞ্জন ঋষি। তার এ বয়সে অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আর যারা এখনো বেঁচে আছে এ বয়সে কেউই কাজ করে না।
কিন্তু রঞ্জন ঋষিকে কাজ করতে হয়ে। প্রতিদিনই ফুটপাতে বসে দিনভর কাজ করতে হয়। কাজ না করলে পেট ভরবে না। পেটের জন্যই রবি আসে প্রতিদিন। বসে ফুটপাতে। দিনভর থাকে কাজে ব্যস্ত। কাজে নেই ছুটি। নেই শীত নেই গ্রীষ্ম। বারো মাসের প্রতিদিন রঞ্জন ঋষি আসে মানুষের দু’পাকে ধুলা-বালু থেকে রক্ষায় জুতা সেরে দিতে। কিন্তু রঞ্জন ঋষি নিজের পা’দুটো ধুলা- বালি থেকে রক্ষার সুযোগ হলো এ জীবনে। আলাপকালে জানা যায়, তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তাঁর সংসার। এ বয়সে শ্রম দিচ্ছেন রোদ বৃষ্টিতে ভিজে। জিজ্ঞেস করতেই জোড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন। তিনি পেশায় একজন মুচি। তিনি ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে আগে জুতা পালিশ করতাম। পাকিস্তান আমলে তৃতীয় ক্লাশ পর্যন্ত পড়েছিলাম। তিন ভাই বোন আর বাবা-মা মিলে পাঁচ জনের সংসার। সেই সংসার চালাতেই বাবা হিমসিম খেতেন। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারে নাই। তৃতীয় ক্লাশ পাশ করে কি করবো। তাই বাবার কাছে থেকে শেখা জুতা মেরামতের কাজ করেই জীবন পার করলাম। এ দিয়েই কোনো মতে ডাল-ভাতের জোগাড় করি।
তাও কি সব সময় করতে পারি? পাকিস্তান পিরিয়ডে এক আনা, দুই আনাতে কালি করেছি। জুতা সেলাই করতাম ছয় আনা, আট আনাতে। কিন্তু বর্তমানে এই কাজ করে দৈনিক প্রায় ২০০-৩০০ টাকা রোজগার করেন। কোনো দিন আবার এর চেয়ে কমও হয়। আবার কোনো দিন কম টাকায় সন্তোষ্ট হয়ে ফিরতে হয় বাড়িতে। এভাবেই এই সামান্য উপার্জনে কোনো রকমে চলছে তাদের সংসার।
যেদিন তাঁর শরীর বা মন সায় দেয়না সেদিন কাজে আসেন না। সংসারও থাকে অচল। দুপুর বাজলেই বাড়ি চলে যাই। রঞ্জন ঋষির বেঁচে থাকার কি নিরন্তর প্রচেষ্টা। তবুই কি রঞ্জন ঋষির মতো মানুষেরা মানুষ হিসাবে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছে? অথচ এই মানুষই আশরাফুল মুখলুকাত। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। রঞ্জন ঋষির সেই শ্রেষ্ঠ জীবের সমাজের একজন।
এ ব্যাপারে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসান বলেন, গংগানগরে রঞ্জন ঋষির মত আরো অনেকেই এ পেশায় নিয়োজিত। করোনা মহামারীর কালেও থেকে নেই তাদের এ পেশা। জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের প্রতিনিয়ত এ পেশায় জড়ো হতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সমাজপতি, ও কল কারখানার মালিকরা যদি তাদের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তাহলে তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে