হবিগঞ্জের মাধবপুর সোনাই নদীর পাড়ে কাটিয়ারা ও গোয়ালনগর। এই জেলে পল্লীতে প্রায় ১শটি পরিবার বসবাস করে। একটি পরিবারের প্রধান মাছ চাষ করা। সোনাই নদীকে ঘিরেই তাদের জীবনযাপন। তারা কখনো কখনো রিকশা ভ্যান বা দিনমজুরের কাজ করে নিয়েছেন। তবে এখন সোনাই নদীতে মাছ নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে পেশা পাল্টানোর আক্ষেপ তাঁদের চোখে মুখে। মাধবপুর উপজেলার হরিশ্যামা গ্রামের বংশী দাস বংশানুক্রমেই মাছ ধরার পেশাকেই বেছে নিয়েছেন।
তবে এখন আর সোনাই নদীতে মাছ নেই। তাই পেশা বদল করার পথ খুঁজছেন। তবে বয়স হয়েছে বলেও অন্য কোন পেশাও সহজে যেতে পারছেন না। শুধু তাই নয় একই অবস্থা উপজেলার হরিশ্যামা, সুন্দাদিল, কাটিয়ারা, গোয়ালনগর গ্রামের জেলে চাষীদের। এখন সোনাই নদীর যে হাল তাতে আমাদের মরে যাওয়াই ভাল। এখন তারা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি। আগে সোনাই নদীতে প্রচুর মাছ ছিল। এই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আমরা সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন তারা সংসার চালাতে পারছে না। সোনাই নদী ছাড়াও বোয়ালিয়া নদীর পানি এখন গোসল করারও উপযোগী নেই। আগে তারা বোয়ালিয়া নদীতে গোসল সহ সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত পানি করে থাকত। এক সময় বোয়ালিয়া নদীর পানি এতই পরিস্কার ছিল যে সেই জল খেয়ে জীবন ধারণ করত। এখন নদীর পানি নোংরা হওয়ায় মানুষের অসুখ বিসুখ দেখা দিয়েছে। গোয়ালনগর গ্রামের দুলাল দাস বলেন, এখন মাছ ধরতে হলে আমাদের ভাটিতে যেতে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হরিপুর সহ হরিণবেড়, গুনিয়াউক, নরহা সহ ছোট ছোট নদীতে। কিন্তু মাছ ধরার জন্য যত জাল লাগে সেই জাল আমাদের নেই। একটা জাল তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা লাগে। একত টাকা আমরা কোথায় পাব ? একটা নৌকাতে ৪/৫জন আমরা জেলে কাজ করি। এই ক জন মানুষের খরচ তারপর তেলের খরচ দিয়ে অত দূরে গিয়ে মাছ ধরা পোষায় না। তাই অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলছে।।
দেবাশীষ দাস জানান, বোয়ালিয়া ও সোনাই নদীতে আমরা এক সময় সব ধরনের মাছ দেখেছি। আমার বয়স এখন ৬২ বছর। ৭/৮ বছর বয়সে আমার জ্ঞান হওয়ার পরে থেকেই আমি বাপ দাদাকে দেখেছি তারা প্রচুর মাছ ধরতেন। বড় মাছ থেকে ইছা মাছ সব ধরনের মাছই তারা ধরতেন। নদীর গভীরে বড় বড় বোয়াল পাওয়া যেত। এ ব্যাপারে মাধবপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক জানান, উপজেলার নদীগুলো যাতে বর্জ্য ফেলা সহ বিভিন্ন কল কারখানার বর্জ্য যাতে ফেলা না হয় এ দিকে আমরা যথেষ্ঠ সোচ্চায় রয়েছি। যদি কেহ বা কাহারা বর্জ্য নদীতে ফেলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আল রনি জানান, গত কয়েক বছরে বোয়ালিয়া সহ সোনাই নদীতে বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ চালিয়ে অবৈধ দলখমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। একটা সময় শিল্প স্থাপন করাটাই গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি পরিবেশ নয়। এখন সময় এসেছে নদী খাল বিল ও জলাশয় রক্ষা করতে। যাদের ইটিপি আছে খরচ বাঁচানোর জন্য তাদের অনেকেই সেটি ব্যবহার করছে না। ফলে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল ইসলাম জানান, কারখানাগুলো যাতে বর্জ্য পরিশোধন করে সেটি তারা তদারকি করছেন। এখন ইটিপি ছাড়া কোন কারখানাকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তবে নদী দূষণে শুধু কারখানার বর্জ্য একা দায়ী নয়। পাশাপাশি পয়-বর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। দূষণের দায়ে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সর্তক করা হচ্ছে। দূষণ রোধে সব রকম চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান উপজেলার প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।